শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের রেল শহর খড়গপুর ফের উত্তপ্ত। প্রকাশ্যে রাস্তার উপর খড়গপুরের প্রবীণ সিপিআই(এম) (CPM Leader) নেতা অনিল দাসকে মারধরের অভিযোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযুক্ত, স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী বেবি কোলে। ঘটনায় খড়গপুর টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অনিলবাবু। যদিও ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশের তরফে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ পরিবারের। শেষমেশ, এবার বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত শহরের এক ব্যস্ত এলাকায়। সেদিন দুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় অনিল দাসকে (CPM Leader) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং শারীরিকভাবে নিগৃহীত করা হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তাঁর গায়ে ঢেলে দেওয়া হয় নীল রং। এই ঘটনা স্থানীয়দের চোখের সামনেই ঘটে। আশেপাশে থাকা কেউ কেউ সেই ঘটনার ছবি ও ভিডিও তুলে দেন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে।
অনিল দাসের ছেলে অনিরুদ্ধ দাস (CPM Leader) বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানাই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। উলটে আমার বাবার বিরুদ্ধেই মিথ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এটা একেবারে পরিকল্পিত প্রতিশোধমূলক কৌশল। তাই আমরা হাইকোর্টে গিয়েছি। বিচারব্যবস্থার উপর আমাদের ভরসা আছে, আশা করি ন্যায় বিচার পাব।”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। জানা গেছে, দলের তরফে অভিযুক্ত বেবি কোলেকে শোকজ় নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁকে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও জবাব মেলেনি।
বাম নেতৃত্বের দাবি, রাজ্যে বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করতে শাসক দলের নেতানেত্রীরা এধরনের হুমকি ও আক্রমণের পথ নিচ্ছেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, “অনিলবাবু নিজে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছি। আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে বিষয়টি শুনানি হতে পারে।”
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। একদিকে বাম নেতৃত্ব এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে, অন্যদিকে জেলা তৃণমূল বলছে, বিষয়টি ‘ব্যক্তিগত বিরোধ’ এবং দলের কোনও অবস্থান এতে নেই। তবে জনসমক্ষে যে ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে রাজনৈতিক উত্তেজনা যে আরও বাড়বে, তা স্পষ্ট।
রাজনৈতিক হিংসার এই ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করল, পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। অনিল দাসের উপর আক্রমণের পর প্রশাসনের নীরবতা এবং পাল্টা অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা – সব মিলিয়ে জনমানসে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। এখন দেখার, হাইকোর্টের রায়ে কোন দিশা পায় এই মামলা এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা।