রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আর দেড় বছর বাকি। ঠিক এমন সময়ে, যখন দলের (CPIM) প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, তখনই উত্তর ২৪ পরগনায় লাল শিবিরে (CPIM) নেতিবাচক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দলের সংগঠন ও নানা পরিকল্পনা শুরু করার ব্যাপারে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই উত্তর ২৪ পরগনাতেও সিপিএম (CPIM) তেমন কোনও সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এরপরও দলের মধ্যে কার্যকরী নেতৃত্বের অভাবই স্পষ্ট হয়ে উঠে আসছে। এরপরেই সিপিএমের অন্দরে গুঞ্জন উঠেছে, জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীর ভূমিকা নিয়ে।
গত শুক্রবার থেকে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্মেলন শুরু হয়েছে। বারাসতের রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের প্রথম দিন উপস্থিত ছিলেন দলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাদের মধ্যে অন্যতম মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, সূর্যকান্ত মিশ্র, অমিয়া পাত্র এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। সম্মেলনের প্রথম দিনেই ১২টি এরিয়া কমিটির প্রতিনিধিরা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীর নেতৃত্বের উপর আলোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমকে কোনোভাবেই আন্দোলনমুখী করা সম্ভব হচ্ছে না। দলের নেতারা জানিয়েছেন, যে রাজ্যে আগামী নির্বাচনের দামামা বাজবে, সেখানে নিজেদের শক্তি পুনর্গঠন করতে হলে আন্দোলনের পথেই এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান জেলা সম্পাদক তার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারছেন না, এমনটাই অভিযোগ।
একাধিক প্রতিনিধি বলেন, মৃণাল চক্রবর্তী অসুস্থ থাকার কারণে কার্যকরী জেলা সম্পাদককে দায়িত্ব নিতে হয়। তবে সে সময়ে দলকে নিয়ে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাদের বক্তব্য, উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমকে আবার শক্তিশালী করতে হলে, জেলা সম্পাদক বদল করতে হবে। অনেকের মতে, রাজ্যের এমন গুরুত্বপূর্ণ জেলার নেতৃত্বে পরিবর্তন অপরিহার্য।
তবে, পাল্টা যুক্তি হিসেবে দলের কিছু সদস্য বলেছেন, মৃণাল চক্রবর্তীর গ্রহণযোগ্যতা এখনও অনেকের কাছে উচ্চ। দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কাউকে পাওয়া সম্ভব নয়, যিনি পুরো দলকে একত্রিত করতে পারবেন। তাদের দাবি, সম্পাদক বদল হলেও তার ফলাফল ইতিবাচক হবে না।
এদিকে, সিপিএম (CPIM) রাজ্য কমিটির অভ্যন্তরীণ ভাবনা অনুযায়ী, সম্পাদক বদলের কোন পরিকল্পনা নেই। জেলা সম্মেলনে প্রথম দিনেই যতটা বদলির দাবি উঠেছে, তা নতুন করে ভাবাচ্ছে দলকে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনগুলিতে, জেলা সম্পাদক বদলের দাবি আরও জোরালো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্মেলন ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে, তাই দেখা যাবে পরবর্তী কিছুদিনে এই দাবি কীভাবে পূর্ণরূপ পায়।
দলের কিছু বিতর্কিত বিষয়ও উঠে এসেছে এই সম্মেলনে। সিপিএমের সদ্য সাসপেন্ড হওয়া নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য এবারের সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও, সম্মেলন কক্ষের বাইরে বেশ কিছু সময় কাটান। দলীয় অন্দরে, তন্ময়ের ভূমিকা নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে, সিপিএম নেতারা আশা করছেন, আগামী কিছু দিনে দলের শক্তি পুনর্গঠন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের ফলাফল যদি পুনরুদ্ধার করতে হয়, তবে উত্তর ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলা থেকে শক্তিশালী নেতৃত্বের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। এখন দেখার বিষয়, সম্মেলনের পরবর্তী দিনগুলোতে জেলা সম্পাদক পরিবর্তন নিয়ে সিপিএম কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেয় কিনা।