কলকাতা, ৫ সেপ্টেম্বর : কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, যা কলকাতাকে নদিয়া জেলার (Cow Smuggling) স্যাটেলাইট শহর কল্যাণীর সঙ্গে সংযুক্ত করে, সম্প্রতি অবৈধ গরুপাচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। গতকাল, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, এই এক্সপ্রেসওয়েতে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন যুবক একটি পিক-আপ গাড়ি থামিয়ে দেখেন, তাতে অমানবিকভাবে বাঁধা অবস্থায় গরু বোঝাই করা হয়েছে।
গরুগুলি এমনভাবে বাঁধা ছিল যে কিছু গরু কষ্টে ছটফট করছিল। জানা গেছে, এই গরুগুলি উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, যে জেলাটি বাংলাদেশের সীমান্তের সঙ্গে সংলগ্ন।।কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, যা ৪৪.১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪-৬ লেন বিশিষ্ট একটি টোল রাস্তা, কলকাতা থেকে সোদপুর, ব্যারাকপুর, নৈহাটি এবং কল্যাণীর মতো উত্তরের শহরতলির সঙ্গে দ্রুত সংযোগ স্থাপন করে।
এই রাস্তাটি ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের বিকল্প হিসেবে কাজ করে এবং যাতায়াতের সময় ২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪০ মিনিটে নামিয়ে এনেছে। তবে, এই রাস্তাটি গরুপাচারের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে, বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনার বঙ্গোপসাগর সীমান্তের কাছে অবস্থিত পেট্রাপোলের দিকে।
গতকালের ঘটনায়, যুবকরা পিক-আপ গাড়িটি থামিয়ে দেখেন, গরুগুলি অত্যন্ত অমানবিক ভাবে বাঁধা ছিল। কিছু গরু এতটাই অস্বস্তিতে ছিল যে তারা ছটফট করছিল। এই যুবকরা স্থানীয় পুলিশকে খবর দেয়, এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে গরুগুলিকে উদ্ধার করে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই গরুগুলি সম্ভবত বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলাগুলি গরুপাচারের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, এবং কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে এই অবৈধ বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে প্রায় ২,২১৭ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সংলগ্ন। এই সীমান্তের বড় অংশ, বিশেষ করে নদী ও জলাভূমির কারণে, বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে, গরুপাচারের জন্য এই এলাকাগুলি পাচারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড থেকে গরুগুলি ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় এবং কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, জেসোর রোড এবং নদিয়ার ঈশ্বর গুপ্ত সেতু হয়ে বাংলাদেশের দিকে পাচার করা হয়।
বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) জানিয়েছে, গরুপাচারের পরিমাণ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১৫ সালে প্রতি বছর প্রায় ২০-২২ লক্ষ গরু পাচার হতো, যা এখন কমে ২-২.৫ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। বিএসএফ-এর নতুন কৌশল, যেমন খানা কাটা এবং বেড়ার নিরাপত্তা বাড়ানো, এই কমে যাওয়ার কারণ।
তবে, পাচারকারীরা এখনও নতুন পথ এবং কৌশল ব্যবহার করছে, যেমন টেটুলিয়া এবং অ্যাংরাইল সীমান্ত। অ্যাংরাইলের ভৌগোলিক অবস্থান, যেখানে ইছামতি নদী তিন দিক থেকে ঘিরে রয়েছে, পাচারকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
গতকালের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে গাড়ির চালক এবং একজন সহযোগীকে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং গরুগুলি স্থানীয় গোশালায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে, এই ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনায় গরুপাচারের বৃহৎ নেটওয়ার্কের দিকে ইঙ্গিত করে।
বিএসএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে গরুপাচারের ৮০ শতাংশ ঘটনা ঘটে। পাচারকারীরা প্রায়ই গরুগুলিকে ওষুধ দিয়ে অস্থির করে তোলে এবং বেড়া থাকলে কাঠের ক্রেন ব্যবহার করে সীমান্তের ওপারে পাঠায়।
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, গরুপাচার শুধু অবৈধ নয়, এটি গবাদি পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতাও। স্থানীয় একজন যুবক বলেন, “এই গরুগুলোকে যেভাবে বাঁধা হয়, তাতে তাদের কষ্ট হয়। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।” স্থানীয় প্রশাসন এবং বিএসএফ-কে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নতুন কালারে 2025 Yamaha R15 V4 বাজারে শোরগোল ফেলতে এলো, দাম শুরু 1.68 লাখ থেকে
এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরুপাচারের সমস্যাকে নতুন করে সামনে এনেছে। এই অবৈধ বাণিজ্যের বাজার মূল্য প্রায় ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম ভারতের তুলনায় দ্বিগুণ, যা এই পাচারকে লাভজনক করে তুলেছে। তবে, বিএসএফ-এর কঠোর নজরদারি এবং স্থানীয়দের সচেতনতার কারণে এই অবৈধ কার্যকলাপ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।