বাংলাদেশি নিয়ে আন্দোলনকারীরা ‘পাঁঠা’: শওকত মোল্লার মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক

বাংলাদেশি ইস্যু নিয়ে আন্দোলনরত বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। ভাঙড় ১ নম্বর ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এম এস…

Saokat Molla

বাংলাদেশি ইস্যু নিয়ে আন্দোলনরত বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। ভাঙড় ১ নম্বর ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এম এস শফি আহমেদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি বনভোজন ও আলাপচারিতা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বিজেপি নেতাদের ‘পাঁঠা’ বলে কটাক্ষ করেন।

সভার পটভূমি
ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকের শাকসহর অঞ্চলে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শওকত মোল্লা। যুব তৃণমূলের এই আয়োজনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। তবে সভার মূল আকর্ষণ ছিল শওকত মোল্লার বক্তব্য, যা ইতিমধ্যেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

শওকত মোল্লার বক্তব্য
সভামঞ্চ থেকে শওকত মোল্লা বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিজেপি নেতারা অহেতুক রাজনীতি করছে। পাশের দেশের ঘটনা নিয়ে এখানে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে। অথচ, দেশের সরকার এই বিষয়ে নীরব। আর এই বাংলায় কয়েকটি ‘পাঁঠা’ বিজেপির নাম নিয়ে মিছিল করছে। তারা বলছে বর্ডার বন্ধ করতে হবে। বর্ডার বন্ধ করার দায়িত্ব কি তাদের? ভারত সরকার যদি চায়, এক মিনিটের মধ্যে বর্ডার বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের কিংবা তাদের কিছু করতে হবে না।”

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
শওকত মোল্লার এই বক্তব্য নিয়ে বিরোধীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপির দাবি, তৃণমূল সরকার এবং তাদের নেতারা সবসময় বাংলাদেশিদের পক্ষে সুরক্ষার কথা বলে এসেছে। বিজেপির এক নেতা বলেন, “তৃণমূল নেতারা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এখন কুরুচিকর ভাষা ব্যবহার করছেন। শওকত মোল্লার মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কলুষিত করছে।”

বিজেপি আরও দাবি করেছে, বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধে তারা সরব হয়েছে। আর তৃণমূল তা বিরোধিতা করছে, কারণ তাদের ভোটব্যাংক এদের উপর নির্ভরশীল।

তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি
তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য শওকত মোল্লার বক্তব্যের পক্ষে সাফাই দিয়েছে। তাদের মতে, “বিজেপি প্রতিদিন রাজ্যের সম্প্রীতিতে আঘাত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ইস্যুকে সামনে রেখে বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি করছে। শওকত মোল্লা বাস্তব কথা বলেছেন, যা বিজেপির গায়ে লেগেছে।”

তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে। কেন্দ্র সরকারের হাতে বর্ডার নিয়ন্ত্রণের সমস্ত ক্ষমতা থাকলেও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে।

Advertisements

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
শওকত মোল্লার বক্তব্য এবং এর প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ই এই ইস্যুকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ এবং বর্ডার সুরক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে বিতর্ক চলছে। বিজেপি যেখানে বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে দেখাচ্ছে, তৃণমূল সেখানে বিজেপির অবস্থানকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বলে অভিযোগ করছে।

ভবিষ্যৎ রাজনীতি
শওকত মোল্লার বিতর্কিত মন্তব্যের ফলে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিরোধীদের দাবি, শওকত মোল্লার বক্তব্য তৃণমূলের দুর্বল অবস্থান প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল দাবি করছে, বিজেপি ইস্যুটি নিয়ে অযথা রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

বাংলার রাজনীতিতে বাংলাদেশ ইস্যুতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শওকত মোল্লার মন্তব্য রাজনৈতিক ময়দানে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা আগামী দিনেই স্পষ্ট হবে।