রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে জলজীবন মিশনের আওতায় নলবাহিত পানীয় জল (drinking water) পৌঁছানোর উদ্দেশ্য ছিল, তবে তা নিয়ে বেশ কিছু বিরক্তিকর অভিযোগ উঠে এসেছে। অভিযোগ, যে জল গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছানোর কথা, সেই জল ব্যবহার করা হচ্ছে মাছ চাষ, গরু–ছাগল স্নান, ধান চাষ, পোলট্রি, গ্যারাজ, এমনকি বাড়ি নির্মাণেও! এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের কাছে প্রায় ২০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, ৪৬৭টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অপব্যবহার রোধে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি, দুটি হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) নম্বর চালু করা হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ পানীয় জলের অপব্যবহারের (water misuse) তথ্য সরাসরি রাজ্য সরকারকে জানাতে পারবেন। বিভাগীয় মন্ত্রী পুলক রায় জানিয়েছেন, এভাবে অপব্যবহার রোধ করার জন্য জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্রের জলজীবন মিশনের লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছানো। এই প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার দেয়, বাকি খরচ সরকার বহন করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন চাইছেন এবং একাধিক বৈঠকেও তিনি এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। গত সোমবার, রাজ্যের জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি একটি রিভিউ বৈঠকও হয়েছে, যেখানে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বিধানসভায় বুধবার, পুলক রায় জানান, রাজ্যের ১ কোটি ৭৫ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারে প্রায় ৯৪ লক্ষ স্থানে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তবে, বেশ কিছু জায়গায় এই পানীয় জলের অপব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি জানান, অনেক জায়গায় আইসক্রিম কারখানা, গাড়ি ধোয়ার কাজে, এবং কৃষিকাজ, মাছ চাষে এই জল ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি, গরু–ছাগল স্নানও করানো হচ্ছে এই জল দিয়ে। এর বিরুদ্ধে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও পুলিশে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তবে এই ধরনের মামলায় অভিযুক্তরা জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন, কারণ পানীয় জলের অপব্যবহার সংক্রান্ত কোনো কঠোর আইন নেই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের মতে, এই ধরনের ব্যবস্থা আসলে সমস্যা সমাধানে কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে সবচেয়ে বেশি অপব্যবহারের অভিযোগ এসেছে, যেখানে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। নদিয়াতে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি (৮৩টি) এফআইআর দায়ের হয়েছে।
এভাবে যদি অপব্যবহার অব্যাহত থাকে, তবে গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জল পৌঁছানোর প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন ও উদ্দেশ্য সফল হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কড়া আইন ও ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে নজর দিচ্ছে।