মুর্শিদাবাদের কান্দি রাজা বীরেন্দ্রচন্দ্র ল’ কলেজে এক ছাত্রীকে (College Girl) ঘিরে ঘটল অমানবিক ঘটনা। কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক সিনিয়র ছাত্রের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে কলেজ কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নিগ্রহ, মারধর এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচ জন ছাত্র এবং একজন ছাত্রী রয়েছেন।
জানা গিয়েছে, গত ৮ জুলাই ওই ছাত্রী কলেজে (College Girl) গেলে তাঁকে ও তাঁর বান্ধবীকে একটি ক্যাফেতে দেখা করার প্রস্তাব দেন এক সিনিয়র ছাত্র। সেই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করতেই পরিস্থিতি ঘোরালো চেহারা নেয়। অভিযোগ, এরপরই ছাত্রীকে কলেজের একটি ঘরে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে ছাত্রীকে প্রথমে ধাক্কা মারা হয়, তারপর অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক নিগ্রহ চালানো হয়।
ছাত্রী জানিয়েছেন, একাধিক ‘দাদা’ বা সিনিয়র ছাত্র মিলে তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারার পাশাপাশি গলা টিপে ধরার চেষ্টা করেন। এমনকী মুখে নখের আঁচড় পর্যন্ত কেটে দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়। ছাত্রীকে মাঠের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে পেট, বুক ও পিঠে একের পর এক লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ।
পরে কলেজের কিছু অশিক্ষক কর্মী এবং সহপাঠীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। সঙ্গে সঙ্গে আহত অবস্থায় তাঁকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনায় নির্যাতিতা ছাত্রী কান্দি থানায় ছয়জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা বর্তমানে পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্ত চালানো হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত তৃতীয় বর্ষের ছাত্র পাল্টা অভিযোগ এনেছে নির্যাতিতার বিরুদ্ধে। তার দাবি, ওই ছাত্রী তার বাবা-মা সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেন এবং তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এমনকি, ছাত্রী নিজেই তার সামনে পোশাক খুলে হুমকি দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছে অভিযুক্ত ছাত্র। এই বিষয়টি সে কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনার পর কলেজ চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রী কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুচিস্মিতা নাগ বলেন, “ঘটনাটি কলেজের ক্লাসরুম বা অফিসিয়াল জায়গায় ঘটেনি। তবু আমরা পুলিশকে সমস্তরকম সহযোগিতা করছি। অধ্যক্ষ ছুটিতে আছেন। তিনি ফিরলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর স্থানীয় মানুষজনের পাশাপাশি শিক্ষামহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কলেজ চত্বরের নিরাপত্তা ও ছাত্রছাত্রীদের মনোবল নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এধরনের ঘটনা একদিকে যেমন নিরাপত্তার অভাবকে স্পষ্ট করে, অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য, লিঙ্গসংবেদনশীলতা ও নৈতিক শিক্ষার ঘাটতিকেও সামনে আনে। পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন বহু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।