আষাঢ়-শ্রাবণের মাঝে রাজ্যে টানা অতিবৃষ্টি। সেইসঙ্গে ডিভিসি (DVC)-র ছাড়া জল যেন ‘জোড়া ফলায়’ বিপদ বাড়িয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোণা এবং হুগলির আরামবাগে। প্লাবনের জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত। এবার সেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আগামী ৫ অগস্ট ঘাটাল যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তার আগে ৪ অগস্ট তিনি হুগলির আরামবাগে পরিদর্শনে যেতে পারেন বলেও সূত্রের খবর।
বর্তমানে বঙ্গে অতিবর্ষণের কারণে একাধিক জেলার নিচু এলাকা জলের তলায়। নদী, খালবিল, ছোট ছোট জলাশয় উপচে উঠে প্লাবিত করেছে বসত এলাকা ও চাষের জমি। সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে ঘাটাল অন্যতম। প্রতি বর্ষায় ঘাটালে জলযন্ত্রণা নতুন নয়। তবে চলতি বছর বৃষ্টির পরিমাণ বেশি এবং সেই সঙ্গে ডিভিসির জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রশাসনকে না জানিয়েই নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যেই সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা ডিভিসির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ডিভিসির তরফে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে হঠাৎ করে জল ছাড়ার ফলে ঘাটাল, চন্দ্রকোণা, আরামবাগের মতো বিস্তীর্ণ এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। শহরাঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, স্কুল, হাসপাতাল ও বাজার ঘরেও জল ঢুকেছে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়ে স্কুলে, ক্লাবে কিংবা পঞ্চায়েত ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে মাঠে নামতে পারেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, আগামী ৫ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটাল পরিদর্শনে যেতে পারেন। তার আগের দিনই হুগলির আরামবাগ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনিক বৈঠক এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কিছু প্লাবনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখবেন বলে অনুমান। ঘাটালে পরিদর্শনের পর ৬ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে ভাষা আন্দোলন দিবস উপলক্ষে মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন বলেও জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বর্ষার সময়ে ঘাটাল এলাকায় জল জমে থাকায় সেখানকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন ধরেই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে জনপ্রতিনিধিরা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিষয়টিতে উদাসীনতার অভিযোগ উঠলেও রাজ্য সরকার নিজের খরচে সেই মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে জল নিকাশির বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্লাবনকবলিত এলাকায় ত্রাণ শিবির, খাবার বিতরণ, স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। তবে জল না নামা পর্যন্ত স্থায়ী স্বস্তি মিলবে না বলেই আশঙ্কা স্থানীয়দের। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে দ্রুত সাড়া মেলার আশা করছেন ঘাটালবাসী।