দুর্গাপুর: বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অজয় নদের উপর গড়ে ওঠা স্থায়ী সেতুর উদ্বোধন করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। আজ, মঙ্গলবার বীরভূম জেলার ইলামবাজার থেকে ভার্চুয়ালি এই সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি। ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর নামকরণ হয়েছে “জয়দেব সেতু”। এই সেতু দুর্গাপুর থেকে সিউড়ি কিংবা বোলপুর যাওয়ার পথে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করবে বলে আশাবাদী রাজ্য প্রশাসন।
বীরভূমের জয়দেব এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার বিদবিহার অঞ্চলের মধ্যে সংযোগকারী এই সেতুর মাধ্যমে দু’জেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুসংহত হবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে নদী পেরোনোর সমস্যায় পড়তেন বহু মানুষ। তাই এই সেতু তাদের দৈনন্দিন যাত্রাপথে এক নতুন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাঁকসার বিদবিহারেও ভার্চুয়ালি একটি মঞ্চের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, গলসির বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই, জেলা শাসক পন্নামবলাম এস, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউড়ি, এডিডিএ-র চেয়ারম্যান কবি দত্ত, নগর নিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল প্রমুখ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই সেতুর ফলে সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হবেন। জয়দেবের মেলায় যাতায়াতও আরও সহজ হবে। এটি শুধু একটি সেতু নয়, দুই জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়।”
এই সেতু উদ্বোধনের পরই শুরু হয়েছে সরকারি বাস পরিষেবা। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের পক্ষ থেকে দুর্গাপুর-সিউড়ি রুটে নতুন বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল জানান, আপাতত একটি বাস চালু হলেও ধাপে ধাপে এই রুটে আরও বাস সংযোজন করা হবে।
মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানান, “এই সেতুর মাধ্যমে শুধুমাত্র স্থানীয় যাত্রীরা উপকৃত হবেন না, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে পণ্য পরিবহণেও সুবিধা হবে। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে।”
এলাকার এক শিক্ষক আনন্দময় গরাই বলেন, “কাঁকসা থেকে বীরভূমের স্কুলে যাতায়াত ছিল দুরূহ। এই সেতু বহুদিনের দাবি ছিল আমাদের। আজ তা পূরণ হওয়ায় আমরা গর্বিত।”
সাধারণ মানুষের মুখেও আজ খুশির হাসি। তাঁরা বলছেন, “দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হলো। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এই উপহারের জন্য।” এই সেতু শুধুই যোগাযোগের সেতু নয়, এটি ভবিষ্যতের উন্নয়নের সেতুবন্ধন হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।