“বাবা আমি ভুল করিনি, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি না”—সুইসাইড নোটে লিখে আত্মঘাতী নবম শ্রেণির ছাত্র

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: পাঁশকুড়ার ‘চিপস কাণ্ড’-এর ছায়া এবার কাঁথির পিছাবনীতে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি থানার অন্তর্গত পিছাবনী এলাকায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রের রহস্যমৃত্যু (Student Dies)…

"বাবা আমি ভুল করিনি, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি না"—সুইসাইড নোটে লিখে আত্মঘাতী নবম শ্রেণির ছাত্র

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: পাঁশকুড়ার ‘চিপস কাণ্ড’-এর ছায়া এবার কাঁথির পিছাবনীতে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি থানার অন্তর্গত পিছাবনী এলাকায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রের রহস্যমৃত্যু (Student Dies) ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ, স্কুলের এক ছাত্রীর উদ্দেশ্যে কটুক্তির অভিযোগে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বছর ১৫-র সূর্য মান্না। মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোটে সে লিখেছে, “বাবা আমি ভুল করিনি, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি না। আমার জন্য তোমাকে অপমানিত হতে হল।”

সূর্য মান্না স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার, প্রতিদিনের মতো স্কুলে গিয়েছিল সে। অভিযোগ, স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করে সূর্য। যদিও তার স্পষ্ট দাবি, সে ওই মেয়েটিকে চেনে না এবং কিছুই বলেনি। স্কুল থেকে ফেরার পথে বই আনতে বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বের হয় সূর্য। সেই সময় স্থানীয় পিছাবনী বাজারে কিছু লোকজন তাকে আটকায় ও প্রকাশ্য দিবালোকে মারধর করে, এমনকি তার পরিবারের সামনেই তাকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।

   

সূর্যের বাবা রবীন্দ্রনাথ মান্না বলেন, “আমার ছেলে ওই মেয়েকে চিনত না। শুধু সন্দেহের বশে তাকে আটকে অপমান করা হয়। আমি ওর সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলাম, সবার সামনে ওকে মারধর করা হয়। তারপর রাতেই ও বলেছিল—‘আমি কিছু করিনি বাবা’। শুক্রবার সকালে দেখি ঘরের দোতলায় গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে। আমার ছেলে অন্যায়ের শিকার।”

সূর্যের ঘর থেকে একাধিক সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। যেখানে স্পষ্ট লেখা, “আমি মেয়েটিকে চিনি না। বাবা, তুমি অপমানিত হলে। আমি ভুল করিনি। আমাকে ভুল বোঝা হয়েছে।”

অন্যদিকে, মেয়েটির বাবার বক্তব্য, “আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। জানতে পেরে মেয়েকে নিয়ে সরে যাই। সূর্যকে কে বা কারা ঘিরে ধরেছিল, সেটা আমার জানা নেই।”

Advertisements

ঘটনার তদন্তে নেমেছে কাঁথি থানার পুলিশ। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, এই ঘটনায় রাজ্যের অন্য এক ঘটনা ফের উঠে এসেছে। গত মে মাসে পাঁশকুড়ায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে চিপস চুরির অভিযোগ তুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণেন্দু দাসকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনাতেও ছাত্রটি আত্মহত্যা করে। পরে সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণ মেলে সে চুরি করেনি। সেই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই সূর্যর মৃত্যুকে তুলনা করছেন।

জেলাজুড়ে শোকের ছায়া। স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা ক্ষোভে ফুঁসছেন। প্রশ্ন উঠছে—সত্যি কি একটা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে একজন নাবালককে হেনস্থা করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া যেতে পারে?

পুলিশের দাবি, সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ৩০২ ধারাতেও মামলা হতে পারে। তবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুল, সমাজ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন।