বারুইপুরে পুলিশের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সংঘর্ষ

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে ফের একবার উত্তেজনার ঝড় উঠেছে। এবার বারুইপুরে পুলিশের সঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সংঘর্ষের ঘটনা সামনে এসেছে। আজ, ১৯ মার্চ ২০২৫,…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/subhendu-2.jpg

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে ফের একবার উত্তেজনার ঝড় উঠেছে। এবার বারুইপুরে পুলিশের সঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সংঘর্ষের ঘটনা সামনে এসেছে। আজ, ১৯ মার্চ ২০২৫, শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বারুইপুরে একটি অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল আগামী ২০২৬ এর নির্বাচনের কর্মসূচি এবং জনসংযোগ। কিন্তু এই কর্মসূচির মাঝেই পুলিশের সঙ্গে তাঁর তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। এর মাঝেই তৃণমূল সমর্থকরা কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। স্লোগান পাল্টা স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বারুইপুরের আবহাওয়া।

জানা গেছে, শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর দল বারুইপুরে একটি প্রতিবাদ মিছিল ও জনসভার আয়োজন করেছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস স্থানীয়ভাবে জনগণের উপর জুলুম করছে এবং বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে এলাকায় তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। কিন্তু এই কর্মসূচি শুরুর আগেই পুলিশ ব্যাপক বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মিছিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, এই মিছিলের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়নি, এবং এটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। শুভেন্দু অধিকারী এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি পুলিশকে “তৃণমূলের দালাল” বলে কটাক্ষ করে বলেন, “পুলিশ এখানে জনগণের স্বার্থে কাজ করছে না, বরং শাসক দলের হয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে এসেছি, কিন্তু পুলিশ আমাদের গলা টিপে ধরছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, রাজ্যে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমন করার জন্য সরকার পুলিশকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

   

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শুভেন্দু ও তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জেরও প্রস্তুতি নেয় বলে খবর। বিজেপি কর্মীরা দাবি করেছেন, পুলিশ তাদের উপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, তারা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কোনও অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়নি। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী শুধুমাত্র রাজনৈতিক মাইলেজ নিতে এই ধরনের নাটক করছেন। তিনি জানেন বাংলার জনগণ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই এখন অশান্তি সৃষ্টি করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন।” তৃণমূল আরও দাবি করেছে যে, বিজেপি এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে “গণতন্ত্রের উপর আঘাত” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। দলের এক নেতা বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিরোধীদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বারুইপুরের এই ঘটনা তার প্রমাণ। আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব।” সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, এবং বিজেপি সমর্থকরা পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করছেন।
এই ঘটনার পর বারুইপুরে পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার প্রতিবাদে আইনি ও রাজনৈতিক পথে লড়াই চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, “এটা শুধু আমার উপর হামলা নয়, বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আক্রমণ। আমরা হারব না।” এই বিরোধ রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চলমান সংঘাতকে আরও জোরালো করেছে। আগামী দিনে এই ঘটনা কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।