নদিয়া: ফের বিতর্কে রাজ্যের সিভিক ভলেন্টিয়ার (Civic volunteer) বাহিনী। এবার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই স্বেচ্ছাসেবী কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে নদিয়া জেলার চাপড়া থানার পুলিশ। অভিযুক্তের নাম অমিত পাল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ জুলাই রাতে ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেত্রী রানাবন্ধ এলাকা থেকে খ্রিস্টান পাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় এলাকায় একটি গলির মধ্যে মদ্যপানের আসর চলছিল। অভিযোগ, সেই আসরে অমিত পাল (Civic volunteer)-সহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে দাবি, সেই সময় ওই তৃণমূল নেত্রী পথ দিয়ে যাওয়ার সময় অমিত পাল তাঁর হাত ধরে টানাটানি করেন। অভিযোগ, তিনি নেত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় ওই নেত্রী কোনওরকমে পালিয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছন।
কিন্তু ঘটনায় এখানেই ইতি পড়েনি। অভিযোগ, অমিত পাল (Civic volunteer) তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বাড়ির দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে, লাথি মারে এবং তাঁকে বাইরে বের করে আনতে চেষ্টা করেন বলেও দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
এ বিষয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে চাপড়া থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও অভিযুক্ত তখনই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এরপর তৃণমূল নেত্রী লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তে নেমে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে অমিত পালকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার তাঁকে কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন চাপড়া থানার এক পদস্থ পুলিশ আধিকারিক।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে এবং গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে।
এই ঘটনার জেরে ফের প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের সিভিক ভলেন্টিয়ার ব্যবস্থাকে ঘিরে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে একাংশ সিভিক কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অসদাচরণ এবং অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এবার শ্লীলতাহানির মতো সংবেদনশীল অভিযোগ সেই বিতর্ককে আরও এক ধাপ বাড়াল।
তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতানেত্রী ইতিমধ্যেই ঘটনাটিকে “লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়” বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা দাবি করছেন, দ্রুত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি প্রশাসনিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে— এমন দায়িত্বশীল পদে থাকা এক কর্মীর থেকে এমন আচরণ কীভাবে সহ্যযোগ্য?
সামগ্রিকভাবে ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, রাজ্যে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের কার্যকলাপ ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি প্রয়োজন। মহিলাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রশ্নে কোনওভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয়— এই দাবি তুলেছেন বিভিন্ন মহিলা সংগঠনও।
অভিযুক্তের বিচার আইনি পথেই হবে, তবে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া রাজ্য রাজনীতিতে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে তা নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।