ভারতে ফিরে হুঙ্কার চিন্ময়কৃষ্ণের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ

ভারতে ফিরে হুঙ্কার চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) আইনজীবী (lawyer) রবীন্দ্র ঘোষের (Rabindra Ghosh)। বাংলাদেশে (Bangladesh) চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তিনি…

Chinmoy Krishna lawyer

ভারতে ফিরে হুঙ্কার চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) আইনজীবী (lawyer) রবীন্দ্র ঘোষের (Rabindra Ghosh)। বাংলাদেশে (Bangladesh) চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তিনি যে ধর্মীয় নেতা, সন্ন্যাসী এবং সনাতন ধর্মের প্রচারক, তাঁর গ্রেপ্তারের ঘটনা শুধুমাত্র বাংলাদেশের (Bangladesh) আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করেনি, বরং এটি দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ তৈরি করেছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেপ্তার বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত হতে পারে।

চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগটি ওঠার পর থেকেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং ধর্মীয় নেতা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। গত মাসে, তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা দাখিলের পর থেকে বেশ কিছু প্রতিবাদী মিছিল এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশে বাংলাদেশের (Bangladesh) বিভিন্ন সনাতন ধর্মাবলম্বী, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়, তাঁদের ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবি তুলেছেন। তাদের মতে, চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেপ্তার একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ, যা মূলত তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আক্রমণ।প্রবীণ আইনজীবী জানালেন, ঢাকা থেকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য এসেছেন তিনি। সাত-আট দিন থাকব। এইমস হাসপাতালে তাঁর আগে অপারেশন হয়েছিল। সেটারই ফলো আপ করাতে এসেছেন। 

   

রবীন্দ্র ঘোষ (Rabindra Ghosh), চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) পক্ষে জোরাল কণ্ঠস্বর, বলেছেন যে বাংলাদেশে বর্তমানে “আইনের শাসন বলে কিছু নেই”। তিনি দাবি করেছেন যে, দুটি সমান্তরাল প্রশাসন দেশে কাজ করছে, যার ফলে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নির্ধারিত হয় না, বরং ক্ষমতার দখলদাররা নিজেদের স্বার্থে তা পরিচালনা করে। চিন্ময়কৃষ্ণকে শুধুমাত্র একটি সমাবেশের মাধ্যমে জনগণকে সনাতন ধর্মের প্রতি সচেতন করার কারণে শাসক দল তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা দায়ের করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই অভিযোগের বিপরীতে, রবীন্দ্র ঘোষ আরও বলেন, “চিন্ময়কৃষ্ণের কোনো অপরাধ নেই। তিনি কেবল সনাতন ধর্মের প্রচার করেছেন, যা তার মৌলিক অধিকার।”

চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট ঘটনা: রাষ্ট্রদোহের মামলার ভিত্তি?
চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া ধ্বজা টাঙানোর ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ঘটনায়, তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আরও কয়েকজন হিন্দু নেতা রয়েছেন, তবে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিন্ময়কৃষ্ণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি এই মামলাটি দায়ের করেন। যদিও চিন্ময়কৃষ্ণ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবুও গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনার পর থেকেই, বাংলাদেশের সনাতন ধর্মের অনুসারীরা প্রতিবাদ জানিয়ে মাঠে নেমে এসেছেন। তাঁদের দাবি, সরকারের এই পদক্ষেপটি ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি আঘাত, এবং এটি প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, যেন চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগটি খতিয়ে দেখে সুবিচার করা হয়।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি: আশঙ্কা ও প্রতিবাদ
চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) গ্রেপ্তারির ঘটনাটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও এই ঘটনাকে ধর্মীয় নিপীড়ন হিসেবে দেখছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর সরকারিভাবে নিপীড়ন এবং অত্যাচার বাড়ছে, এবং এটি সরকারের অস্পষ্ট নীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণেই ঘটছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, “বাংলাদেশে (Bangladesh) ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেপ্তার তারই একটি উদাহরণ। তিনি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রচার করেছিলেন, কিন্তু তাকে দমন করা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।”

বিভিন্ন প্রতিবাদী সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তির জন্য সরব হয়েছেন। মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশ সরকারকে তার সংখ্যালঘু জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে।

আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের প্রতিশ্রুতি: লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ (Rabindra Ghosh) জানিয়েছেন, তিনি আগামী ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণ করবেন এবং সেখানে তাঁর পক্ষে সওয়াল করবেন। তিনি জানান, “আমি লড়াই চালিয়ে যাব। এই লড়াই শুধু চিন্ময়কৃষ্ণের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের (Bangladesh) সব সংখ্যালঘু মানুষের জন্য। আইনত, চিন্ময়কৃষ্ণ কোনো অপরাধ করেননি এবং তাকে জামিন দেয়া উচিত।”

এছাড়া তিনি আরও বলেছেন, “আমরা জানি যে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসন একদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার কথা বলছে, তবে বাস্তবে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। পুলিশ এবং প্রশাসন যারা খোদ সরকারের স্বার্থে কাজ করছে, তারা দেশের জনগণের অধিকারকে লঙ্ঘন করছে।”

চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেপ্তার: বাংলাদেশের ধর্মীয় পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) গ্রেপ্তার বাংলাদেশে (Bangladesh) ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক মহলে এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বিশেষ করে, সনাতন ধর্মের অনুসারীদের প্রতি সরকারের দমনপীড়নের মাত্রা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি দাবি করছে, বাংলাদেশের সরকারের উচিত সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা।

আসন্ন শুনানিতে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে, তবে একটি বিষয় পরিষ্কার – চিন্ময়কৃষ্ণের (Chinmoy Krishna) গ্রেপ্তার এবং তার পরবর্তী ঘটনাগুলি বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।