বাংলাদেশ (Bangladesh) হয়ে পশ্চিমবঙ্গ (Bengal) রাজ্যে ঢুকছে বিষাক্ত চিনা রসুন (Chinese Garlic)। এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ চিনা রসুনে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ পেটে গেলে যকৃত, কিডনি এবং স্নায়ুতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। গত কয়েকদিনে প্রশাসন এই বিষাক্ত রসুনের চোরাচালান রোধ করার জন্য বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। বিশেষ করে, সিউড়ি (Suri) শহরের সবজি বাজারে জেলা পুলিশের (Police) এনফোর্সমেন্ট বিভাগ একটি তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেছে। যদিও, এ পর্যন্ত সিউড়ি বা অন্যান্য এলাকায় চিনা রসুনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি, তবে প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
চিনা রসুনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের হুঁশিয়ারি নতুন নয়। ২০১৪ সালে ভারত সরকার চিন থেকে রসুন আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, কারণ চিনা রসুনে ফাঙ্গিসাইড মিথাইল ব্রোমাইড ব্যবহৃত হয়, যা মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই রাসায়নিক পদার্থ স্নায়ুর সমস্যা, কিডনি বা যকৃতের ক্ষতি এবং এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশ হয়ে বিভিন্ন চোরা পথে এই চিনা রসুন রাজ্যে ঢুকছে। নদিয়ার তেহট্ট বাজারে সম্প্রতি এক অভিযানে পুলিশ এক ক্যুইন্টাল চিনা রসুন সহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যা রাজ্যে ঢুকছিল।
জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, “চিন থেকে রসুন আমদানি ২০১৪ সাল থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে। এই রসুনে ছত্রাকের সংক্রমণ রোধ করতে মিথাইল ব্রোমাইড ব্যবহার করা হয়, যা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তবে, দীর্ঘ দিন নিষিদ্ধ থাকার পরও এই রসুন রাজ্যে চোরাচালানের মাধ্যমে ঢুকছে, যা আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।”
এদিকে, চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, চিনা রসুনের মধ্যে থাকা মিথাইল ব্রোমাইড পেটে গেলে তা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত, যকৃত, কিডনি ও স্নায়ু তন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। লিভার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, “এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” তিনি বলেন, “খাদ্যসামগ্রী যা আমরা খাই, তা সবসময় নিরাপদ নাও হতে পারে। আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষত বাজারে কিনে আনা যে সবজি বা মসলাগুলি আমরা খাচ্ছি, সেগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।”
বুধবার সিউড়ির নেতাজি পাইকারি বাজারে যে অভিযান চালানো হয়, তাতে প্রশাসন চিনা রসুনের কোনো ট্রেস খুঁজে পায়নি। তবে এই ধরনের অভিযান গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেক বাজার বিক্রেতা এবং গ্রাহকরা। পাইকারি রসুন বিক্রেতা বেণু হাটি এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, তারা মুর্শিদাবাদ জেলার নাজিরপুর থেকে ঘরোয়া রসুন কিনে বাজারে বিক্রি করেন, তাই চিনা রসুন সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। অন্যদিকে, বাঁশঝোরের রসুন বিক্রেতা ওসমান গণী এবং শেখ সালামত জানান, “আমরা চিনা রসুন ও ভারতের রসুনের মধ্যে তফাৎ বুঝি না। আমাদের শুধু অনুরোধ, কেউ যাতে আমাদের ঠকিয়ে না নেয়, এবং পুলিশ যেন অভিযান চালিয়ে যায়।”
এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ডিএসপি স্বপন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “নদিয়ার তেহট্ট বাজারের মতো কিছু এলাকা থেকে চিনা রসুন রাজ্যে ঢুকছে। সিউড়ি ও অন্যান্য বাজারে এই রসুনের উপস্থিতি পরীক্ষা করতে আমাদের অভিযান চলছে। এই অভিযান চলতে থাকবে এবং আমরা অন্যান্য বাজারগুলিতেও তল্লাশি চালাব।”
তিনি আরও জানান, চিনা রসুন সাধারণত লালচে রঙের হয়, তবে রাসায়নিক স্প্রে করলে তা সাদা হয়ে যায় এবং সাধারণ রসুনের মতো দেখায়। তাই বাজারে যারা রসুন বিক্রি করেন, তাদেরকে সচেতন থাকতে হবে যাতে কোনোভাবে চিনা রসুন বাজারে না আসে।
এদিকে, প্রশাসন সতর্ক করেছে যে এই ধরনের চিনা রসুনের চোরাচালান হলে তা জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। এই বিষাক্ত রসুনের চোরাচালান রোধের জন্য পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রশাসনিক বিভাগও নিয়মিত তল্লাশি চালাতে শুরু করেছে। রাজ্যের সীমান্ত এলাকা এবং বিভিন্ন বাজারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এই চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এবং যারা এই রসুন পরিবহন বা বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের উদ্যোগ জনগণের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আর পুলিশ এবং প্রশাসনকে আরো সচেতন হতে হবে যাতে চোরাচালানকারীরা কোনোভাবেই তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে না পারে। পাশাপাশি, জনগণকেও সচেতন থাকতে হবে এবং বাজার থেকে রসুন কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।