হাসপাতালের গাফিলতিতে শিশুর ক্ষতি, তদন্তে নামল স্বাস্থ্য কমিশন

Child Suffers Due to Alleged Medical Negligence, Health Panel Acts

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক চিকিৎসা গাফিলতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সের এক নিরীহ শিশু, ঈশানি, ভুল চিকিৎসার ফলে আজীবনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে দাঁড়িয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন (Swasthya Commission) কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমকে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি, গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তেরও নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ঈশানির জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর। পরিবার তাকে স্থানীয় এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করে। চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর ভরসা রেখে অভিভাবকেরা মেয়েটিকে তাদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেখানে ভুল ইনজেকশন দেওয়া হয় কিংবা ইনজেকশন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় গুরুতর গাফিলতি ঘটে। এর ফলেই ঈশানির হাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে হাত ফুলে ওঠে, পরে তীব্র ব্যথা ও জ্বর দেখা দেয়। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় শিশুটির হাত ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে।

পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে না পারলেও পরে উপসর্গ তীব্র হওয়ায় ঈশানিকে কলকাতার এক বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটির হাতে সংক্রমণ এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে সঠিক সময় চিকিৎসা হলে এই বিপর্যয় এড়ানো যেত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। চিকিৎসকদের মতে, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই হাতের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

এই ঘটনার পর ঈশানির পরিবার রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়। তারা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করে নির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানির পর রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের গাফিলতি মেনে নেয় এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে কমিশন আরও নির্দেশ দিয়েছে, এই ঘটনায় কী কী গাফিলতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে।

Advertisements

রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের কড়া ভূমিকার প্রশংসা করছেন অনেকেই। শিশুদের চিকিৎসায় এমন গাফিলতি রোধে আরও কঠোর নজরদারি ও নিয়ম লাগু করার দাবি তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষও এই ঘটনার পরে নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন।

ঈশানির মা-বাবার কান্না থামছে না। তারা শুধু চাইছেন, এমন ভুল যেন আর কোনও শিশুর জীবনে না ঘটে। তাদের একমাত্র মেয়ে, যার হাত দিয়ে আঁকতে শেখার কথা ছিল, খেলাধুলা করার কথা ছিল, সেই হাত আজ অচল হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকায় এই ক্ষতি পূরণ হবে না বলেই তাঁদের মত।

এই ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, চিকিৎসা ক্ষেত্রের গাফিলতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। যেখানে জীবনের প্রশ্ন, সেখানে সামান্য অসতর্কতা কিংবা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা একজন শিশুর গোটা ভবিষ্যৎ কেড়ে নিতে পারে। তাই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের উচিত, এমন ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন দুর্ঘটনার শিকার না হয়।