ময়নাগুড়ি (Moynaguri) এলাকায় বালি পাচার (sand smuggling) ও অবৈধ বালি তোলার ঘটনায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ রয়েছে। এলাকার অনেক বাসিন্দাই অভিযোগ করছেন যে প্রশাসন এবং পুলিশের অবহেলার কারণে এই অবৈধ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকছে, এবং এতে পরিবেশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ময়নাগুড়ির বালি পাচার ও অবৈধ বালি তোলার ঘটনায় কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথমত, এই কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে কিছু শক্তিশালী বালি মাফিয়া। তারা দিনের পর দিন নদী থেকে বালি তুলে তা পাচার করছে, আর এতে যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, তা কোনোভাবেই প্রশাসনের নজরে আসছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই বালি পাচারের ফলে নদীর পাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি, চা বাগান এবং স্থানীয় রাস্তা। এছাড়া, নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার ফলে আশপাশের বসতবাড়িও হুমকির মুখে পড়েছে।
এদিকে, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, বিশেষ করে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং বিডিও অফিস বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বহুবার গ্রামবাসীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, কিন্তু এর কোনো সুরাহা হয়নি। পুলিশ যদিও কিছুদিন আগে একটি ট্র্যাক্টর আটক করেছিল, কিন্তু পরে বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত মাফিয়ারা পালিয়ে যায় এবং তারা আবার আগের মতো একই কাজ শুরু করে।
এটি স্পষ্ট যে, এই ধরনের কার্যক্রম রোধ করার জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব বা আর্থিক স্বার্থের কারণে প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর ফলে বালি মাফিয়ারা তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে, এবং সাধারণ মানুষের কাছে প্রশাসনের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। এমনকি, ময়নাগুড়ির ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের কর্মকর্তারাও প্রাথমিক পদক্ষেপ নিলেও পরবর্তীতে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত বা পদক্ষেপ করেননি।
অপরদিকে, ময়নাগুড়ির নদীপাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারা দিনের পর দিন অবৈধ বালি তোলার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কিন্তু প্রশাসন তাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখাচ্ছে না। তাদের মতে, প্রশাসনের কাছে যখনই তারা সমস্যার কথা তুলে ধরছেন, তখনই তাদের কাছে আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক ড. মধুসূদন কর্মকার বলেছেন, “এভাবে অবৈধ বালি তোলার ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। নদীর পাড় ভাঙা, জলস্তরের পরিবর্তন এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না।”
এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন প্রশাসন এই ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না? কেন এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে পুলিশ এবং ভূমি দপ্তর সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না? কী কারণে ময়নাগুড়ি থানা এবং অন্যান্য দপ্তর বরাবরের মতো আশ্বাস দিয়েও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
এতদিন ধরে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম চলতে থাকার ফলে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। তারা মনে করছেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে নদীর পাড় আরও বেশি ভেঙে পড়বে, যার ফলে এলাকার কৃষি এবং পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অবিলম্বে বালি পাচার বন্ধ করতে হবে।
এই পরিস্থিতি সামনে রেখে ময়নাগুড়ির বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister’s) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পুনরায় আবেদন জানাচ্ছেন, যাতে তিনি দ্রুত প্রশাসনকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। তারা আশা করছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের মাধ্যমে প্রশাসন এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করবে এবং এলাকার পরিবেশ রক্ষা করবে। এছাড়া, তারা বলছেন যে, এই ধরনের কাজের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের প্রতি স্থানীয়দের দাবি আরও তীব্র হচ্ছে, এবং তারা আশাবাদী যে, মুখ্যমন্ত্রীর (Chief Minister’s) নির্দেশের পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।