কালীগঞ্জে নাবালিকার মৃত্যুতে CBI তদন্তের দাবি নিহতের পরিবারের

নদিয়ার কালীগঞ্জের মোলান্দি গ্রামে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক আবহ। বাড়ির সামনে বোমা ফেটে মৃত্যু হয়েছে দশ বছরের ওই…

কালীগঞ্জে নাবালিকার মৃত্যুতে CBI তদন্তের দাবি নিহতের পরিবারের

নদিয়ার কালীগঞ্জের মোলান্দি গ্রামে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক আবহ। বাড়ির সামনে বোমা ফেটে মৃত্যু হয়েছে দশ বছরের ওই নাবালিকার। ঘটনার দিন রাতেই চারজনকে গ্রেফতার করেছে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ। যদিও এখনও পর্যন্ত মূল ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়েনি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে এবার সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি জানালেন নিহত শিশুর পরিবার।

কী ঘটেছিল সেদিন?
সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটেছিল ঘটনাটি। অভিযোগ, বিজয়োল্লাসের সময় দুষ্কৃতীরা বাড়ির সামনে বোমা রেখে যায়। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা গ্রাম। সেই সময় বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল ছোট্ট ছাত্রীটি। হঠাৎই ঘটে যায় দুর্ঘটনা— বোমার বিকট আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পড়ে যায় সে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি।

   

মৃতের নাম রোকসানা খাতুন (নাম পরিবর্তিত)। বয়স মাত্র ১০ বছর। পড়ত চতুর্থ শ্রেণিতে। সারা গ্রাম শোকে স্তব্ধ।

পরিবার জানাল অভিযোগ, দিল হুঁশিয়ারি
নিহতের মা সাবিনা বিবি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই কালীগঞ্জ থানার মীরা ফাঁড়িতে ২৪ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যাদের মধ্যে চারজনকে রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু বাকি অভিযুক্তরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

সাবিনা বিবির কথায়, “আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের একমাত্র অপরাধ, আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থক। বারবার হুমকি পেয়েছি। পুলিশকে বলেছি, তাও সুরক্ষা পাইনি। মেয়ের হত্যার বিচার চাই। যদি পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত না করে, আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব। সিবিআই তদন্তের দাবি জানাব।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বলেছেন, “দোষীদের দলীয় পরিচয় না দেখে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।” তবে বিজেপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক হিংসার উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরছে।

Advertisements

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত জারি রয়েছে। গ্রেফতার চারজনকে জেরা করে বাকিদের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। মোলান্দি ও সংলগ্ন এলাকায় চলছে তল্লাশি। স্থানীয় পাটক্ষেত, বাঁশবাগান— কোথাও বোমা বা অস্ত্র লুকোনো আছে কি না, তার খোঁজ করছে বিশেষ দল।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
ঘটনার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মোলান্দিতে। বাবা কর্মসূত্রে ওড়িশায় থাকতেন। মৃত্যুর খবর শুনে তিনি ট্রেনে করে মঙ্গলবার সকালে গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি বলেছেন,

“এই ঘটনার পিছনে যারা আছে, তাদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমি লড়াই চালিয়ে যাব।”

সামাজিক সংগঠন ও শিশু সুরক্ষা কমিশন ইতিমধ্যেই নজর দিয়েছে এই ঘটনায়। শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা এবং বিস্ফোরক ব্যবহার নিয়ে।