আর জি কর (Abhaya)মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট এক জঘন্য ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় শিকার হয়েছিলেন ৩১ বছর বয়সী এক পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তার। অভয়ার বাবা দিল্লিতে এসে ন্যায়বিচারের দাবিতে তাদের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা আশা নিয়ে দিল্লি এসেছি। এক বছর হয়ে গেল, আমরা ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি।
আগামীকাল আমরা সিবিআই ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য টাকা দিয়ে ভোট কিনছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনও উদ্বেগ নেই। আমাদের সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সবকিছু নিয়ে মিথ্যা বলছেন। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জন জড়িত।
যিনি প্রমাণ নষ্ট করার সঙ্গে জড়িত, আমরা তা নিজের চোখে দেখেছি। কিন্তু সিবিআই এসবের প্রতি অন্ধ দৃষ্টি দিয়ে কিছুই করছে না। সিবিআই যা করা উচিত ছিল, তা করছে না। আমরা ন্যায়বিচার চাই। সমাজে যা কিছু ঘটছে, পশ্চিমবঙ্গে তা ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শেষ হবে।”এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে গত জানুয়ারি মাসে সিলদা আদালত ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয়।
তবে অভয়ার পরিবার এই রায়ে সন্তুষ্ট নয়। তারা দাবি করেছেন, এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত, এবং সিবিআই তদন্তে তাদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। অভয়ার বাবা বলেন, “আমরা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছি এবং ৫৪টি প্রশ্ন জমা দিয়েছি।
আদালতের কাছে আমরা এই উত্তর চাই যাতে আমার মেয়ে ন্যায়বিচার পায়। আমার মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যায় অনেক পুরুষ জড়িত। এমনকি প্রমাণ নষ্ট করার পিছনেও অনেকের হাত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ নষ্ট করার প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন।”
২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়, কারণ কলকাতা পুলিশের তদন্তে “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” হয়নি বলে আদালত মনে করে। এরপর সুপ্রিম কোর্ট ১৮ আগস্ট এই মামলার স্বতঃপ্রণোদিত স্বীকৃতি নেয়। সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র এই মামলার শুনানি করেন।
তবে অভয়ার পরিবার সিবিআইয়ের তদন্তের গতি এবং পদ্ধতি নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা অভিযোগ করেছেন, সিবিআই গত নভেম্বরের পর থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে এবং অক্টোবরে দাখিল করা প্রথম চার্জশিটের পর আর কোনও সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেনি।
অভয়ার মা প্রশ্ন তুলেছেন, সিবিআই কেন সিসিটিভি ফুটেজের বিশ্লেষণ নিজেরাই করছে না এবং এত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বিশ্লেষণে প্রায় এক বছর সময় লাগছে কেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ের সঙ্গে শেষবার যে চারজন ছিলেন, তাদের কেন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না?” শিকারের পরিবার এই মামলায় আরও তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছে, যেখানে তারা সঞ্জয় রায় ছাড়াও অন্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা ৪২ দিন ধরে ধর্মঘট করেছেন, হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে। পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট (ডব্লিউবিজেডিএফ) এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে।
তারা অভিযোগ করেছে, রাজ্য সরকার প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে এবং দোষীদের রক্ষা করার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। এছাড়া, আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্ত চলছে, এবং তিনি গ্রেফতার হয়েছেন।
অভয়ার বাবা দিল্লিতে এসে বলেছেন, “আমরা বিজেপি সহ সব রাজনৈতিক দলকে আমাদের সঙ্গে ৯ আগস্টের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি, যা আমার মেয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হবে।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসকে আমরা আমন্ত্রণ জানাইনি, কারণ আমরা বিশ্বাস করি তারা সিবিআই তদন্তে চাপ প্রয়োগ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “সিবিআই যেন রাজনৈতিক বা অন্য কোনও চাপে প্রভাবিত না হয়। আমরা শুধু আমার মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাই।”
এই মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক শুনানি হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চে সুপ্রিম কোর্ট শিকারের পরিবারকে কলকাতা হাইকোর্টে আরও তদন্তের জন্য আবেদন করার অনুমতি দেয়। সিবিআই জানিয়েছে, তারা এই ঘটনায় “বৃহত্তর ষড়যন্ত্র” এবং প্রমাণ নষ্ট করার বিষয়ে তদন্ত করছে। তবে শিকারের পরিবার এবং বিক্ষোভকারী ডাক্তাররা মনে করেন, সিবিআই তদন্তে যথেষ্ট স্বচ্ছতা ও গতি নেই।
‘ফাঁসি ঘর’ বিতর্কে উত্তাল দিল্লি বিধানসভায়, বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত!
এই ঘটনা ভারতে নারী ও ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। শিকারের পরিবারের এই আশা, যে দিল্লি থেকে তারা ন্যায়বিচার পাবেন, এখনও অধরা।