SSC গ্রুপ সি নিয়োগ কাণ্ডে ভিডিও ফুটেজ সহ চূড়ান্ত চার্জশীট জমা সিবিআইয়ের

পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (Group C Scam) গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) আলিপুরের বিশেষ আদালতে একটি চূড়ান্ত চার্জশীট জমা দিয়েছে। এই…

TMC MLA Nirmal Ghosh Reacts After Daughter-in-Law’s Name Appears in Tainted SSC Candidate List

পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (Group C Scam) গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) আলিপুরের বিশেষ আদালতে একটি চূড়ান্ত চার্জশীট জমা দিয়েছে। এই চার্জশীটে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফুটেজ সহ বেশ কিছু নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা এই নিয়োগ দুর্নীতির গভীরতা ও সংগঠিত প্রকৃতিকে আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে।

এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতির একটি গুরুতর দিক উন্মোচন করেছে এবং রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, এই চার্জশীটে ২০১৬ সালের গ্রুপ সি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত একাধিক অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

   

এর মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবিরেশ ভট্টাচার্য, কমিশনের উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। চার্জশীটে বলা হয়েছে, অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক হেরফের করা হয়েছে।

এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একটি অডিও-ভিডিও ক্লিপ সিবিআইয়ের হাতে এসেছে, যা আদালতে প্রমাণ হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে। এই ফুটেজে দুর্নীতির প্রক্রিয়া এবং জড়িত ব্যক্তিদের কথোপকথন স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই।

এই মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০২২ সালে, যখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে সিবিআইকে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি নিয়োগে অনিয়মের তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তদন্তে প্রকাশ পায় যে, ২০১৬ সালের তৃতীয় আঞ্চলিক স্তরের নির্বাচনী তালিকা (আরএলএসটি) প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। অভিযোগ, অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ওএমআর শিটে কারচুপি করা হয়েছে, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এবং র‌্যাঙ্ক জাম্পিং ও আউট-অফ-প্যানেল নিয়োগের মতো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।

সিবিআইয়ের তদন্তে প্রকাশ পায়, প্রায় ৩,৪৮১ জন গ্রুপ সি কর্মী এবং ২,৮২৩ জন গ্রুপ ডি কর্মীর নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। এই চার্জশীটে সিবিআই আরও উল্লেখ করেছে যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত সংস্থা নাইসা কমিউনিকেশনস প্রাইভেট লিমিটেড এবং ইন্ডি ইনফো সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে সংযোগ ছিল, যারা ওএমআর শিট প্রক্রিয়াকরণে জড়িত ছিল।

Advertisements

সিবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফলে হেরফের করা হয়েছে। এছাড়া, পাঁচজন অভিযুক্ত—সুবিরেশ ভট্টাচার্য, পর্ণা বসু, নীলাদ্রি দাস, সমরজিৎ আচার্য এবং পঙ্কজ বনশল—এর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা আদালতে জমা দেওয়া ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও তীব্র হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ এই রায়কে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, এই তদন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “এই চার্জশীট প্রমাণ করে যে তৃণমূল সরকারের আমলে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, এই দুর্নীতির ফলে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২১ সালে গঠিত জাস্টিস বাগ কমিটির রিপোর্টেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওএমআর শিট কারচুপির বিষয়টি উঠে এসেছিল। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তদন্ত শুরু করে। ইডি ইতিমধ্যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে।

পরীক্ষা বাতিলের প্রতিবাদে কলেজস্ট্রিটে এবিভিপির প্রতিবাদ

তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, এই দুর্নীতির আর্থিক লেনদেন শত শত কোটি টাকায় পৌঁছেছে।এই চার্জশীট জমা পড়ার পর আইনি মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, এই মামলায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। সিবিআইয়ের তদন্ত এখনও চলছে, এবং আদালতের পরবর্তী শুনানিতে এই ভিডিও ফুটেজের প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ঘটনা শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরদার করেছে।