মন্দারমণিতে (Mandarmani)অবৈধ হোটেল বা লজ ভাঙা নিয়ে জেলাশাসকের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ানো হলো। কলকাতা হাই কোর্ট(Mandarmani) মঙ্গলবার এক আদেশে জানায়, ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্দারমণির (Mandarmani) ওই ‘অবৈধ’ হোটেলগুলির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। আগামী ১৭ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গত ১১ নভেম্বর মন্দারমণির (Mandarmani)‘অবৈধ’ হোটেল ও লজ ভাঙার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে মন্দারমণির (Mandarmani)হোটেল মালিকদের সংগঠন কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন জানায় এবং ২২ নভেম্বর আদালত জেলাশাসকের ওই নির্দেশের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। সেই সময়ে বিচারপতি অমৃতা সিংহ এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বিচারপতি অমৃতা সিংহের অনুপস্থিতির কারণে মঙ্গলবারের শুনানি পিছিয়ে যায়। আদালত সূত্রে জানা যায়, বিচারপতি সিংহ বর্তমানে পোর্টব্লেয়ার বেঞ্চে রয়েছেন, তাই ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্দারমণির অবৈধ হোটেল ভাঙার বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ১৭ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা, কারণ মন্দারমণি এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল, লজ, রিসোর্ট এবং হোম স্টে নির্মাণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চলছে। সিআরজেড (কোস্টাল রেগুলেটেড জ়োন ম্যানেজমেন্ট অথরিটি) গত ১১ নভেম্বর মন্দারমণি এবং তার আশেপাশের আরও চারটি মৌজার মধ্যে মোট ১৪৪টি অবৈধ নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল। সিআরজেডের জেলা কমিটির তরফে বলা হয়, এই হোটেলগুলো উপকূলীয় বিধির প্রতি অবহেলা করে গড়ে উঠেছিল এবং তাই এসব নির্মাণ অবৈধ।
এরপর, ২০২২ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতও এই অবৈধ নির্মাণগুলিকে ভাঙার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। এই সমস্ত হোটেলগুলির বিরুদ্ধে যেসব আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছিল, তা সরকারের আইন অনুযায়ী উপকূলীয় এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।
এদিকে, মন্দারমণির হোটেল অ্যাসোসিয়েশন আদালতে আবেদন করে, তাদের যুক্তি ছিল যে, ওই সমস্ত হোটেলগুলি অনেকেই সৎভাবে তৈরি করেছেন এবং তাদের ব্যবসা ও জীবিকা ওই হোটেলগুলির ওপর নির্ভরশীল। তাই তারা এই নির্মাণগুলিকে ভেঙে দেওয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় এবং স্থগিতাদেশ চায়। আদালত তাদের আবেদন গ্রহণ করে, এবং ২২ নভেম্বরের আদেশে তারা ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেয়।
মন্দারমণি এলাকার হোটেল মালিকদের সওয়াল করেছেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন যে, ওই হোটেলগুলি বহুদিন ধরে চলছিল এবং সেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এমনকি অনেক পর্যটকও এসব হোটেলে থেকে মন্দারমণির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। তবে আদালত জানায় যে, স্থানীয় পরিবেশ এবং উপকূলীয় বিধি অনুসারে এই ধরনের নির্মাণ অবৈধ এবং এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মন্দারমণি এলাকায় অবৈধ হোটেলগুলির সংখ্যা কমানো এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্য প্রশাসন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সিআরজেডের নিয়ম অনুসারে, উপকূলীয় অঞ্চলে অবৈধ নির্মাণগুলি ভাঙা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি পরিবেশ রক্ষা এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলির টেকসই উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয়।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ জানুয়ারি হবে, যেখানে হোটেল মালিকদের যুক্তি এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্দারমণিতে কোন অবৈধ হোটেল ভাঙার নির্দেশ কার্যকর করা যাবে না।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার অংশ, কারণ মন্দারমণি একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং সেখানকার ব্যবসা ও পরিবেশের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি।