রাজ্যের সব পুরসভায় বাম আমলে নিযুক্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের পেনশনসহ অন্যান্য অবসরকালীন সুবিধা পেতে হাইকোর্টের এক বড় নির্দেশ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্যের অনুমোদন ছাড়া শুধুমাত্র পুরবোর্ডের অনুমতি নিয়ে চাকরি পাওয়া চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা পেনশন বা অবসরকালীন সুবিধা পাবেন না। এর ফলে, বহু পুরসভা কর্মী যারা দীর্ঘদিন ধরে চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করে এসেছেন, তাঁদের জন্য এই সিদ্ধান্ত বড় ধাক্কা হতে পারে।
বিচারপতি কৌশিক চন্দের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া শুধুমাত্র পুরবোর্ডের অনুমতি নিয়ে যারা চাকরি পেয়েছেন, তারা সরকারি আর্থিক সুবিধার যোগ্য নন। রাজ্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়ায় তাঁদের জন্য পেনশন বা অন্যান্য অবসরকালীন সুবিধা প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় যেখানে রায়গঞ্জ পুরসভার এক চুক্তিভিত্তিক কর্মী মারা যান এবং তাঁর স্ত্রী পেনশন ও অন্যান্য অবসরকালীন সুবিধা দাবি করেন। কিন্তু আদালত ওই আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালতের যুক্তি ছিল, পুরসভা চুক্তিতে নিয়োগ করার পর রাজ্যের অনুমোদন নেয়নি, সুতরাং ওই কর্মীকে অবসরকালীন সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। বিচারপতির বক্তব্য, পুর আইন অনুসারে কোনো কর্মী যখন রাজ্যের অনুমোদন ছাড়াই চুক্তিতে নিয়োগ হন, তখন সেই কর্মী সরকারি সুবিধার জন্য যোগ্য হন না।
এরই মধ্যে, মামলার অন্যতম দুই আইনজীবী শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্ক নাগ জানিয়েছিলেন, ২০১১ সালের পর যাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়েছে, তাদের অনেকের জন্য বিভিন্ন রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে অনেক চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে রাজ্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে, এই বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেছেন, “এটি পরিষ্কার যে, যাঁকে নিয়োগ করতে হবে, সেই পদটির অনুমোদিত হওয়া প্রয়োজন, এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। এরপর যদি আবেদনকারীরা চান, তাহলে তাঁরা ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারেন।”
তবে এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বাম আমলে যে নিয়োগগুলি হয়েছিল, তা কি অবৈধ ছিল? এই প্রসঙ্গে আইনজীবী শামিম বলেন, “এই নিয়োগগুলি কি অনুমোদিত ছিল, তা দেখা যেতে পারে, হয়তো সেগুলো লোকালি নিয়োগ করা হয়েছিল।”
এছাড়াও, মামলার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারের অনুমোদনের গুরুত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে অনেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী রাজ্য অনুমোদন পেয়েছেন, কিন্তু পুরসভার আইনের নিয়ম অনুযায়ী যদি এই কর্মীরা অনুমোদন না পান, তবে তাঁদের জন্য অবসরকালীন সুবিধা পাওয়ার সুযোগ সীমিত।
অর্থাৎ, এই রায়ের ফলে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা একে বাম সরকারের অবৈধ নিয়োগের ফল হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে এই বিষয়ে স্পষ্টতা ও সঠিক নিয়োগের দাবি উঠছে। এর ফলে ভবিষ্যতে পুরসভায় নিয়োগ ও সরকারি সুবিধা প্রদান নিয়ে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।