মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্টের

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের (Murshidabad Waqf Protests) মধ্যে উদ্ভূত সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) শনিবার এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ…

Calcutta High Court Orders Central Forces Deployment in Murshidabad

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের (Murshidabad Waqf Protests) মধ্যে উদ্ভূত সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) শনিবার এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে। আদালত মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ এসেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে, যিনি জেলার অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই মামলার জরুরি প্রকৃতি বিবেচনা করে ছুটির দিনেও কলকাতা হাইকোর্টে বিশেষ শুনানির আয়োজন করা হয়।

শনিবার বিকেলে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করে। আদালত জানিয়েছে, শান্তি পুনরুদ্ধার এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে। এই নির্দেশের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ান, নিমতিতা এবং জাফরাবাদের মতো উত্তপ্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।

Also Read | রাজ্যে ওয়াকফ আন্দোলনে রণক্ষেত্র মুর্শিদাবাদ, নিহত তিন জন

মুর্শিদাবাদে গত কয়েকদিন ধরে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। শনিবার সকালে জাফরাবাদে একটি মর্মান্তিক ঘটনায় হরগোবিন্দ দাস (৬০) এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাস (৪৫)-কে তাদের বাড়িতে হামলাকারীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরিবারের অভিযোগ, একদল দুষ্কৃতী তাদের বাড়ি ঘিরে লুটপাট শুরু করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এছাড়া, ধুলিয়ানে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এই ঘটনাগুলি জেলায় উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবীরা এই পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে সরাসরি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁরা যুক্তি দেন, রাজ্য পুলিশ একাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে, এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই আবেদনের জরুরি প্রকৃতি বিবেচনা করে হাইকোর্ট ছুটির দিনেও বিশেষ শুনানির ব্যবস্থা করে, যা এই মামলার গুরুত্বকে আরও উজ্জ্বল করে।

আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, শান্তি রক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এলাকায় ইতিমধ্যেই রেলওয়ে পুলিশ ফোর্স (আরপিএফ) এবং সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) মোতায়েন রয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে সতর্কতা বজায় রাখা হচ্ছে।

Advertisements

এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করে বলেছেন, তাঁর সরকার এই আইন রাজ্যে কার্যকর করবে না। তিনি জনগণকে শান্ত থাকার এবং সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মমতা বলেন, “এই আইন কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। উত্তর তাদের কাছ থেকে চাওয়া উচিত।” তবে, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়িয়েছে।

ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এই আইন সম্প্রতি সংসদে পাস হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেয়েছে। বিরোধী দলগুলি এটিকে “মুসলিম বিরোধী” বলে সমালোচনা করলেও, কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, এটি ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনবে। মুর্শিদাবাদে এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তীব্র হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ মহানির্দেশক রাজীব কুমার জানিয়েছেন, “জঙ্গিপুরে অশান্তির পরিবেশ দেখা গেছে। কোনও গুন্ডামি সহ্য করা হবে না। আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে কঠোরভাবে মোকাবিলা করছি।” তিনি জনগণকে গুজব এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে হাইকোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সমালোচনা করেছেন।

এই ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, হাইকোর্টের নির্দেশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন আগামী দিনে রাজনৈতিক সমীকরণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও, অনেকে শান্তি ফিরে আসার আশা প্রকাশ করছেন।