নয়াদিল্লি ২ ডিসেম্বর: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA Supreme Court SIR) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলতে থাকা মামলায় নতুন মোড়। বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আগত হিন্দু শরণার্থীদের জন্য ‘স্পেশাল ইনহ্যাবিট্যান্ট রেসিডেন্ট’ (SIR) স্ট্যাটাস দেওয়ার আর্জি জানিয়ে যে পিটিশন দাখিল হয়েছে, তার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী করুণা নন্দী সোমবার সুপ্রিম কোর্টকে বলেছেন, “যাঁরা CAA-র আওতায় আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং ততদিন তাঁদের অন্তর্বর্তীকালীন ভাবে SIR তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক।”
করুণা নন্দী জানান, বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যে হাজার হাজার হিন্দু পরিবার পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এখনও নাগরিকত্বের অপেক্ষায়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করা এই শরণার্থীরা CAA-র আওতায় আবেদন করেছেন, কিন্তু প্রক্রিয়া এতটাই ধীরগতি যে অনেকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন।
১৫ বছরের সরকারি কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত মঙ্গলবার প্রকাশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী
ফলে তাঁরা ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে পারছেন না, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এমনকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বা সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করতে গেলেও বাধার মুখে পড়ছেন।“এঁরা ভারতের নাগরিক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু এখনও তাঁরা ‘বিদেশি’ তকমা নিয়েই বসে আছেন,” বলতে গিয়ে করুণা নন্দী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া, কোচবিহারের শরণার্থী কলোনিগুলোর দিকে।
তিনি জানান, তাঁর ক্লায়েন্টদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়েই ভারতে চলে এসেছিলেন, কেউ এসেছেন ১৯৮০-৯০-এর দাঙ্গার সময়। তাঁদের সন্তানেরা এখন তৃতীয় প্রজন্মে পা দিয়েছে, কিন্তু এখনও নাগরিকত্বহীন।করুণা নন্দী বেঞ্চকে জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২৩ সালে ‘স্পেশাল ইনহ্যাবিট্যান্ট রেসিডেন্ট’ নামে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা চালু করেছিল, যাতে এই শরণার্থীরা অন্তত ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড পেতে পারেন।
কিন্তু কেন্দ্রের আপত্তির পর সেই প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে। “যতদিন না CAA-র আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততদিন এঁদের SIR স্ট্যাটাস দিয়ে মানবিক সাহায্য করা হোক,” তিনি আবেদন জানান।কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, CAA-র নিয়ম ২০২৪ সালের মার্চ মাসেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে এবং অনলাইন পোর্টাল চালু আছে। ইতিমধ্যে লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে এবং প্রক্রিয়া চলছে।
তবে তিনি এও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন SIR দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের এখতিয়ারে নয়, এটা কেন্দ্রের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।”বেঞ্চ প্রশ্ন করেন, “যাঁরা ২০১৪-র আগে এসেছেন এবং আবেদন করেছেন, তাঁদের অন্তত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কী বাধা আছে?”
তুষার মেহতা জানান, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য নাগরিকত্বের প্রমাণ লাগে। করুণা নন্দী পালটা যুক্তি দেন, “তা হলে অন্তত ‘প্রভিশনাল সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট’ দেওয়া হোক, যেমনটা অসমে NRC-এর ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিল।”
