প্রতারনার শিকার ময়নাগুড়ির ব্যবসায়ী, ওটিপি বলতেই উধাও লক্ষাধিক টাকা

ময়নাগুড়ির (Maynaguri) এক ওষুধ ব্যবসায়ী (businessman) সাইবার (cyber) প্রতারণার (fraud) শিকার হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ১১ ডিসেম্বর, তবে বিষয়টি পরিতোষ দাসের নজরে আসে শুক্রবার। তিনি ময়নাগুড়ির…

Cybercrime in Karnataka cooperative bank

ময়নাগুড়ির (Maynaguri) এক ওষুধ ব্যবসায়ী (businessman) সাইবার (cyber) প্রতারণার (fraud) শিকার হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ১১ ডিসেম্বর, তবে বিষয়টি পরিতোষ দাসের নজরে আসে শুক্রবার। তিনি ময়নাগুড়ির হাসপাতালপাড়ার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং একজন ছোটো ওষুধ ব্যবসায়ী। তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রতারকরা একে একে ১, ৪২, ২১৯ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনার পর পরিতোষের জীবন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। তিনি এখন নিজের টাকা ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন এবং সাইবার ক্রাইম শাখায়ও মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনার শুরু ১১ ডিসেম্বর, যখন পরিতোষ দাসের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তে একজন ব্যক্তি নিজেকে ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে পরিতোষের সঙ্গে কথা বলেন। ওই ব্যক্তি জানান, পরিতোষের দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে— একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং আরেকটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, পরিতোষের কারেন্ট অ্যাকাউন্টটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় তার অ্যাকাউন্টে ফাইন লাগতে পারে। তবে, তিনি বলেন, যদি পরিতোষ চায়, তাহলে ফাইন ছাড়াই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা সম্ভব, আর এর জন্য তাকে একটি নম্বরে কল করতে হবে।

   

প্রতারণার ফাঁদে পরিতোষ সহজেই পড়েন। তিনি ব্যাঙ্ক কর্মীর কথা বিশ্বাস করে ওই নম্বরে ফোন করেন। ফোন করার পর পরিতোষের কাছে একটি ওটিপি (OTP) বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড আসে। ওই ব্যক্তি তাকে বলে, তিনি সেই ওটিপি জানিয়ে দিলে তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরিতোষ কোনো সন্দেহ ছাড়াই সেই ওটিপি প্রদান করেন। কিছুক্ষণ পর আরও একটি ওটিপি আসে, যা পুনরায় পরিতোষ ওই ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর যা ঘটে, তা ছিল তার জন্য অপ্রত্যাশিত এবং ভয়ানক। কিছুক্ষণ পর, পরিতোষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা খালি হয়ে যায়।

পরিতোষ যখন শুক্রবার সকালে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চেক করেন, তখন তার চোখ কপালে উঠে যায়। তিনি দেখতে পান যে তার রেকারিং ডিপোজ়িট অ্যাকাউন্ট থেকে ১,৪১,৭১৯ টাকা এবং সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০০/- টাকা উধাও হয়ে গেছে। ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্টে দেখা যায়, ওই টাকা একাধিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। তখনই পরিতোষ বুঝতে পারেন, তিনি সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে।

পরিতোষ প্রথমে স্থানীয় ব্যাঙ্ক শাখায় যোগাযোগ করেন এবং সমস্যাটি জানান। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, এরকম প্রতারণার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, যদিও উপভোক্তাদের সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, প্রতারকরা তাদের ছক ততটাই উন্নত করেছে, যা অনেক সময় সহজেই ভিকটিমদের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পরিতোষকে জানায় যে, তার অ্যাকাউন্টের তথ্য ব্যবহার করে প্রতারকরা তার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এরপর, পরিতোষ সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি পুলিশকে জানান, প্রতারকরা তাকে একটি ফোন করে এবং ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয়ে তার অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য জানতে চেয়েছিল। তার বিশ্বাস করিয়ে দিয়ে ওটিপি চেয়ে তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছিল। পরিতোষের অভিযোগের ভিত্তিতে জলপাইগুড়ি সাইবার ক্রাইম শাখা তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ এও জানিয়েছে যে, সাইবার প্রতারণার ঘটনা এখন একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে।

প্রতারণার শিকার হওয়া পরিতোষ জানান, প্রতারকরা সাধারণত ব্যাঙ্কের নাম দিয়ে এমন ফোন কল করে এবং ভুক্তভোগীদের বিভ্রান্ত করে তাদের তথ্য চুরি করে। তার মতে, “আমি ভাবতেই পারিনি যে, ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয়ে কেউ আমাকে প্রতারণা করতে পারে। আমি একেবারে সরল বিশ্বাসে তাদের কথা মেনে নিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পেরেছি যে, এ ধরনের ফোন কল আসলে সাইবার প্রতারণার একটি অংশ। সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।”

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে যে, তারা গ্রাহকদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে, জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে যথেষ্ট জানাশোনার অভাবের কারণে প্রতারকরা এখনও সফল হচ্ছে। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন ফোন কল পান, তাহলে তাকে সতর্ক হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং কোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করতে বলা হয়েছে।

এই ঘটনা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়া যায়। সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করছে এবং তাদের ফাঁদে মানুষকে নিয়ে আসছে। গ্রাহকদের অবশ্যই যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক ফোন কল থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং কখনোই ব্যাঙ্কের তথ্য বা পিন নম্বর শেয়ার করতে হবে না। শুধু ব্যাঙ্কের ফোন নাম্বার থেকেই যোগাযোগ করতে হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি প্রকৃত ব্যাঙ্কের নম্বর।

বর্তমানে, সাইবার ক্রাইমের ঘটনা তীব্রভাবে বাড়ছে। তাই, জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। পুলিশ এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত চেষ্টা করছে যাতে জনগণ সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আরও সচেতন হয়। সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি, সঠিক তথ্য এবং শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে সাইবার প্রতারণার মতো অপরাধের মোকাবিলা করা সম্ভব।