দিঘা যাওয়ার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, আহত ১২

স্বাধীনতা দিবসের দিন খুশির আবহের মধ্যেই ঘটে গেল ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা এলাকায়, খড়্গপুর-বালেশ্বর ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর শুক্রবার দুপুরে এই…

bus-to-digha-crashes-on-national-highway-near-belda-injuring-several-on-independence-day

স্বাধীনতা দিবসের দিন খুশির আবহের মধ্যেই ঘটে গেল ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা এলাকায়, খড়্গপুর-বালেশ্বর ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর শুক্রবার দুপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিঘামুখী (Digha bus accident)  একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ধারে উল্টে যায়। ঘটনায় অন্তত ১২ জন গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন। প্রত্যেককে দ্রুত উদ্ধার করে বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দুপুর দেড়টা নাগাদ। বেলদার শ্যামপুরা এলাকায় হঠাৎই বাসটির (Digha bus accident)  চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দুর্ঘটনার সময় বাসের গতি বেশ ছিল। সেই সময় রাস্তার এক পাশ দিয়ে অন্য একটি ট্রাক দ্রুতগতিতে চলে যাওয়ায় বাস চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলস্বরূপ, বাসটি সোজা সড়কের ধারে গিয়ে উল্টে পড়ে।

   

দুর্ঘটনার (Digha bus accident)  পরপরই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে গিয়ে আহতদের উদ্ধার কাজে হাত লাগান। বাসের ভেতরে আটকে পড়া কয়েকজন যাত্রীকে স্থানীয়রা ভাঙা কাচ ও বাঁশের সাহায্যে বাইরে বের করেন। খবর পেয়ে বেলদা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুতর। কয়েকজনের মাথায় এবং বুকে চোট লেগেছে, আবার কারও হাত বা পা ভেঙে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁদের এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের একটি দল তাঁদের চিকিৎসায় নিয়োজিত। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আপাতত কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়, তবে কয়েকজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে, বাসটির ব্রেক ফেল করেছিল অথবা চালক হঠাৎ স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ হারান। দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে প্রায় ৩০ জন যাত্রী ছিলেন। দিঘায় স্বাধীনতা দিবসের ছুটি কাটাতে যাচ্ছিলেন অনেকে। ফলে আনন্দযাত্রা মুহূর্তের মধ্যে পরিণত হয় আতঙ্ক ও শোকে।

ঘটনার জেরে খড়্গপুর-বালেশ্বর জাতীয় সড়কে(Digha bus accident)  কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, পরে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে ক্রেন দিয়ে রাস্তা থেকে সরানো হয়। পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে এবং চালককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।

Advertisements

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার বাঁক ও যানবাহনের দ্রুতগতি মিলিয়ে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাঁরা বারবার প্রশাসনের কাছে গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও নজরদারি ক্যামেরা বসানোর দাবি জানিয়েছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘপথের বাসগুলিতে ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ব্রেক টেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হবে।

স্বাধীনতা দিবসের আনন্দঘন দিনে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা গোটা এলাকার মনখারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আহত যাত্রীদের পরিবার ইতিমধ্যেই হাসপাতালে এসে তাঁদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সঠিক চিকিৎসা ও বিশ্রামে কয়েক দিনের মধ্যে অধিকাংশ সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে এই ঘটনার পর আবারও উঠে এসেছে প্রশ্ন—দীর্ঘপথের বাসযাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত?

এই ঘটনার রেশ কাটতে সময় লাগবে। আনন্দ ভ্রমণের স্মৃতি বদলে গিয়েছে আতঙ্কের ছবিতে। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই মুহূর্তের চিৎকার, বাসের উল্টে যাওয়ার শব্দ ও যাত্রীদের আতঙ্ক চিরকাল মনে থেকে যাবে।