News Desk: কাঁটাতার নেই এমন সীমান্তেই এখন গোরু পাচারের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ পাহারা কড়াকড়ি থাকলেও, অবাধে কৃষকের জমির ফসল নষ্ট করে দৈনিক গোরু পাচারে। এমন অভিযোগ।
দিনে চিকিৎসার নাম করে আনা গোরু, রাতে পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। সর্বস্ব হারাচ্ছেন হতদরিদ্র কৃষকরা। কারণ জমির সবজি নষ্ট করেই এই কারবার চলছে। উপার্জনের লোভে স্থানীয় অনেকেই কাজ শুরু করেছেন গোরুর ক্যারিয়ার হিসেবে।
দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া সীমান্তে এখন এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশিরা খোলা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। উত্তর প্রদেশ, বিহার থেকে আসা গোরু এই সীমান্ত দিয়ে পাচার করে। পাচারকারীদের টার্গেট ফাঁসিদেওয়ার ব্লকের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার কাঁটাতারহীন সীমান্ত। মহানন্দা নদী পেরিয়ে গেলেই বাংলাদেশ। সেই কারণেই সুবিধা পাচারে।
বিএসএফ এর নজর এড়িয়ে নদী পেরিয়ে, বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা হয়ে ওপার বাংলায় গোরু পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাচার ঠেকাতে ফাঁসিদেওয়া সীমান্তে সিমেন্টের গার্ডওয়াল তৈরি হয়েছে। কিন্তু, পড়েনি কাঁটাতার। কাজ শুরু হলেও, দুই বছর ধরে সেই কাজ আটকে রয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ এর গুলি চালানোর আওয়াজে হামেশাই আত্মা কেঁপে ওঠে গ্রামবাসীদের। অথচ, আটকানো না পাচার।
ফাঁসিদেওয়ার কাছেই পশু হাসাপাতাল। সেখানে চিকিৎসার নাম করে গোরু আনা হয়। এরপর সেই গোরু স্থানীয়দের বাড়িতে ৫ হাজার টাকা জোড়া দরে রাখা হয়। রাতে বাংলাদেশি পাচারকারীরা ভারতে প্রবেশ করে সেই গোরু নিয়ে যায় বাংলাদেশে।
লাইনম্যান দুই হাজার টাকার বিনিময়ে বিএসএফ এবং স্থানীয় পুলিশের উপর নজর রাখে। নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে যায় গোরু। ক্যারিয়াররা গোরু প্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। ব্লকের চেনা রুট কালুজোত হয়ে ক্যানাল রাস্তা ধরে ধনিয়া মোড়, গ্যাস গোডাউন, বন্দরগছ এলাকা দিয়ে জমির ধান, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো সহ নানা ধরণের সবজি মাড়িয়েই নিয়ে যাওয়া হয় গোরু। মাথায় হাত কৃষকদের। সবাই জানলেও, চুপ রয়েছেন ক্ষমতাসম্পন্ন বাবুরা।
শীতের মরশুমে কুয়াশাকে হাতিয়ার করে এই কারবার প্রতি বছর বেড়ে যায়। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে গাঁজা, কাফ সিরাপও এই সীমান্তকে কাজে লাগিয়ে ভারত থেকে পাচার করা হচ্ছে। দেশের নিরাপত্তা এখন ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
উত্তরবঙ্গের এই গ্রামে গোরু পাচার বন্ধ করা চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় কৃষক হরিপদ দেবনাথ বলেন, আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ, বিএসএফ, কাউকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বহুবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে আর্জি জানিয়েও, কাঁটাতার তৈরি হয়নি।
স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মহম্মদ আইনুল হক কৃষকদের ফসল ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন। এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হলেও, কেন শেষ সেই কাজ হল না তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন। সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে। এই ঘটনায় পুলিশ আধিকারিকদের কাছে কোনও সদুত্তর নেই। কার্সিয়াংয়ের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মনোরঞ্জন ঘোষ বলেন, এই বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।