টাকা দিলেই মিলছে হিন্দু পরিচয়, শান্তনুর বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিযোগ

বনগাঁ রাজনীতির মঞ্চে ফের উত্তাল পরিস্থিতি। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের (Shantanu Thakur) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও…

টাকা দিলেই মিলছে হিন্দু পরিচয়, শান্তনুর বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিযোগ

বনগাঁ রাজনীতির মঞ্চে ফের উত্তাল পরিস্থিতি। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের (Shantanu Thakur) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। তাঁর দাবি, বনগাঁয় চলতে থাকা সিএএ শিবির থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হিন্দু জাতির সংশাপত্র দেওয়া হচ্ছে, যা বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিক বানানোর পথ তৈরি করছে।

গত কয়েক মাস ধরেই বনগাঁ এলাকায় শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে একাধিক সিএএ ক্যাম্প চালু রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই ক্যাম্প থেকেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে ‘হিন্দু জাতির সংশাপত্র’ প্রদান করা হচ্ছে। এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরা নিজেদের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা এবং হিন্দু পরিচয়ে বৈধ নাগরিকত্ব দাবি করতে পারছেন।

   

পুরপ্রধান গোপাল শেঠের অভিযোগ, “এই সিএএ শিবির করে আসলে সাধারণ মানুষের থেকে টাকা নেওয়ার ফাঁদ পাতা হয়েছে। রাজ্য কিংবা কেন্দ্র, কোনও সরকারই তো বলেনি এভাবে শিবির করার কথা। ওনাকে কে দায়িত্ব দিল এই কাজের?”

তিনি আরও জানান, কিছু আইনজীবীর মাধ্যমে নোটারি করে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় বাসিন্দা বানানো হচ্ছে। এরপর তাঁদের হাতে হিন্দু জাতির সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে তাঁদের নাগরিকত্ব দাবি করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া শুধু অবৈধই নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্যও বিপজ্জনক। তাঁদের দাবি, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিয়ে ভোটব্যাংক তৈরির চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল বলেন, “গোপালবাবু বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেন, কিন্তু সেই অভিযোগের কোনও প্রমাণ থাকে না। কোনও রিপোর্ট আসে না। আসলে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নাগরিকত্বের আবেদন দেখে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে ক্ষমতা হারানোর।”

Advertisements

শান্তনু ঠাকুরের মতুয়া মহা সংঘের পক্ষ থেকেও অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, সিএএ শিবিরে কোনও অবৈধ লেনদেন হচ্ছে না, বরং সাধারণ মানুষকে তাঁদের অধিকার এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত এই অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে গোপাল শেঠ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রমাণসহ বিষয়টি তুলে ধরা হবে এবং আইনি পদক্ষেপের দাবি জানানো হবে।

বনগাঁর এই সিএএ শিবির বিতর্ক কেবল স্থানীয় রাজনীতি নয়, বরং জাতীয় পর্যায়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি হতে পারে একটি বড় রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি, যা শুধু নাগরিকত্ব আইন নয়, সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলবে। অন্যদিকে, অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে তা তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলকে বিপাকে ফেলতে পারে।

এই মুহূর্তে রাজনৈতিক তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে, আর বনগাঁর মানুষ অপেক্ষা করছেন—অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং এর প্রভাব ভবিষ্যতের ভোট রাজনীতিতে কতটা গভীর হয়।