বাগদা: উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার পুলিশ এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে নেমে গ্রেফতার করল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP Leader)-র এক নেতার স্ত্রীকে। ধৃতের নাম শেরফুল মণ্ডল। অভিযোগ, মৃত শাশুড়িকে ‘মা’ দেখিয়ে ভোটার কার্ড তৈরি করে এক বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে অবৈধভাবে আশ্রয় দিতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। অভিযুক্ত সেই বাংলাদেশি নাগরিক আর কেউ নন, স্বয়ং তাঁর স্বামী রিজাউল মণ্ডল—একজন সক্রিয় BNP নেতা, যিনি বর্তমানে পলাতক এবং বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
বাগদা থানার তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, শেরফুল মণ্ডল তার মৃত শাশুড়িকে জীবিত এবং নিজের মা বলে পরিচয় দিয়ে একটি জাল ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করান। সেই নথির সাহায্যে রিজাউল মণ্ডলের নামে ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়। এরপর, তিনি দীর্ঘদিন ভারতে থেকেছেন, এমনকি রাজনৈতিক কাজকর্মেও জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে রিজাউল মণ্ডল এবং তাঁদের বড় ছেলে বাংলাদেশে পালিয়ে রয়েছেন।
বাগদা থানার পুলিশ জানান, দীর্ঘ নজরদারির পর শুক্রবার রাতে শেরফুল মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
বেআইনি অনুপ্রবেশে সহযোগিতা
ভুয়ো নথি তৈরি
ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রতারণা করে আদায়ের চক্রান্ত
জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে
তবে শেরফুল মণ্ডলের দাবি, তিনি স্বামীর নাগরিকত্ব সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাঁর কথায়, “আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে বসবাস করছেন। আমি জানতাম না উনি বাংলাদেশের নাগরিক। এছাড়া, আমি জানতাম না মৃত শাশুড়িকে মা বানিয়ে ভোটার কার্ড বানানো হয়েছে।” এছাড়াও তিনি জানান, হাসিনা সরকারের পতনের পরে তাঁর স্বামী রিজাউল বড় ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রিজাউল মণ্ডল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন স্থানীয় নেতা। প্রায় ৩০ বছর আগে বাগদা থানার অন্তর্গত বাগী গ্রামের বাসিন্দা শেরফুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ভারতেই দীর্ঘদিন বসবাস করতেন তিনি, কিন্তু বৈধ ভারতীয় নথি ছিল কিনা, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকেও এই বিষয়ে জানানো হবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রিজাউল মণ্ডলের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হবে।
বাংলাদেশি নাগরিককে অবৈধভাবে ভারতে আশ্রয় দেওয়া এবং জাল ভোটার কার্ড তৈরি করে ভারতীয় নাগরিকত্বের সুযোগ করে দেওয়ার এই ঘটনায় নিরাপত্তা প্রশ্নে বড়সড় ফাঁকফোকরের ইঙ্গিত মিলছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ধরনের অপরাধ যদি সংঘটিত হয়, তবে তা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাগদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, শীঘ্রই এই মামলায় নতুন তথ্য প্রকাশ্যে আসতে পারে।