SSC নিয়োগে ধাক্কা, হাইকোর্টে অযোগ্যদের বাদের নির্দেশ

কলকাতা: রাজ্যের বহু বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) মাধ্যমে হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে যাঁরা ‘চিহ্নিত…

Jobless Teachers Served Police Notices Can Move Calcutta High Court for Cancellation

কলকাতা: রাজ্যের বহু বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) মাধ্যমে হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে যাঁরা ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ বলে ঘোষিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য। সেইসঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই যদি ওই অযোগ্য প্রার্থীরা আবারও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করে থাকেন, তাহলে সেই আবেদন বাতিল করতে হবে।

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই এই নিয়োগ (SSC) প্রক্রিয়া করতে হবে। অযোগ্যদের কোনও ভাবেই ফের সুযোগ দেওয়া যাবে না।” পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে নতুন করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে।

   

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে চিহ্নিত প্রায় ২৬ হাজার অযোগ্য প্রার্থীর চাকরি বাতিল হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। এরপর নিয়োগে স্বচ্ছতা ফেরাতে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসএসসি। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় বিতর্ক।

সোমবার বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চে ৯টি পৃথক মামলার শুনানি হয়। মামলাগুলির কেন্দ্রীয় অভিযোগ— ৩০ মে এসএসসি যে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থীদেরও আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিচারপতি স্পষ্ট জানান, “SSC-এর নিয়োগ প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী হতে হবে। চিহ্নিত অযোগ্যরা কোনওভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। বিজ্ঞপ্তি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।”

এসএসসির হয়ে এদিন সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যুক্তি দেন, “সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি যে চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।” তাঁর মতে, যদি চিহ্নিত প্রার্থীরা বাদ যান, তাহলে ২০১৬ সালের ব্যর্থ প্রার্থীরাও অংশ নিতে পারবেন না — যা অন্যায়।

তবে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য এই যুক্তিকে গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, “যাঁদের সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণা করেছে, তাঁরা নতুন নিয়োগে অংশ নিতে পারবেন না। এটা স্পষ্ট।”

Advertisements

এই রায়ের পরে রাজ্যের শাসকদল চাপের মুখে পড়েছে। বিরোধীদের মতে, হাইকোর্টের এই রায় প্রমাণ করে যে এসএসসি এবং রাজ্য সরকার এখনও দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আড়াল করতে চাইছে। বিরোধী নেতারা বলছেন, “প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে সরকার বারবার অযোগ্যদেরই সুযোগ দিতে চাইছে।”

হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বহু বছর ধরে চাকরি না পাওয়া যোগ্য প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা আন্দোলন করে আসছেন এবং এই রায় তাঁদের জন্য এক বড় জয় বলে মনে করছেন।

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী SSC-কে নতুন করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনওভাবে চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থী আবেদন করতে না পারেন। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।

এটি শুধুমাত্র নিয়োগ সংক্রান্ত একটি রায় নয়, বরং রাজ্যের শিক্ষা ও প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ। যদি হাইকোর্টের নির্দেশ সঠিকভাবে কার্যকর করা হয়, তাহলে বহু প্রকৃত চাকরিপ্রার্থী আবার নতুন করে আশার আলো দেখতে পারেন।