BJP West Bengal: সিবিআই দিয়ে নেতা গ্রেফতার ‘দাদা’রই কীর্তি! মারাত্মক স্বীকারোক্তি সুকান্তর?

বঙ্গের বিরোধী (BJP West Bengal) রাজনীতিতে এখন যেন সুকান্ত সাইক্লোন চলছে। সুকান্ত মজুমদার তাঁর বক্তব্যে রাজ্য বিজেপির (BJP West Bengal) ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর একটা অংশের রক্তচাপ…

Image of Sukanta Sarkar, a person with a serious expression, with a caption 'On CBI' indicating he is irritated by the miss usage of the Central Bureau of Investigation (CBI)

বঙ্গের বিরোধী (BJP West Bengal) রাজনীতিতে এখন যেন সুকান্ত সাইক্লোন চলছে। সুকান্ত মজুমদার তাঁর বক্তব্যে রাজ্য বিজেপির (BJP West Bengal) ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর একটা অংশের রক্তচাপ বাড়িয়েই চলেছেন। খড়্গপুরের পর এবার শ্রীরামপুর, সুকান্তের বাণীতে অশান্ত হতে চলেছে বঙ্গ বিজেপির (BJP West Bengal) অন্দরমহল?

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পরেই যেন উল্টো সুরে গাইতে শুরু করেছেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকা নয়, একেবারে যেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতেই আসতে চাইছেন তিনি। আর এবার ইডি, সিবিআইকে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যে অভিযোগ বরাবর তৃণমূল শিবির করেছে, তাতেই সীলমোহর দিয়ে দিলেন তিনি?

   

শ্রীরামপুরের কর্মী সভায় সুকান্তর মুখে দাদার কীর্তি ফাঁস! দাদার নাম অবশ্য তিনি নেননি। কিন্তু দাদার কথাতেই সিবিআই দিয়ে যে নেতা গ্রেপ্তার হয়, ঠারেঠারে সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি? এমনকি নাম না করে বঙ্গ বিজেপির (BJP West Bengal) বিপর্যয়ের দায়ও এই ‘দাদার’ ঘাড়েই ঠেলেছেন সুকান্ত। আর এই প্রসঙ্গেই তার মুখে হঠাৎ করে উঠে এলো বীরভূমের কেষ্ট তথা অনুব্রতর মাহাত্ম্য।

সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে গেল ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি

হুগলি এবং শ্রীরামপুর দুই সাংগঠনিক জেলার এদিন কর্মীসভা ছিল শ্রীরামপুরে। সেখানেই দলের পরপর বিপর্যয় এবং ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য সুকান্ত। হিন্দমোটরের এই সভাতে সুকান্ত পরিষ্কার ভাবেই বলেন, দাদাকে বলে সিবিআই দিয়ে নেতা গ্রেফতারেই ডুবেছে বঙ্গ বিজেপি। উদাহরণ হিসেবে তুলে আনেন বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের কথা। দীর্ঘদিন ধরে অনুব্রত সুদূর দিল্লিতে তিহার জেলে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও বিজেপি কেন বীরভূম দখল করতে পারল না প্রশ্ন তুলেছেন তিনি? দাদাকে বলে একে, ওকে সিবিআই দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে জেতা যাবে না এমনটাই তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য। সেরকমই মোদীজি এসে সভা করলেন আর মোদী ম্যাজিকেই সবকিছু জিতে যাবে এটা ভাবাটাও বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলেন সুকান্ত।

কিন্তু সুকান্তের বক্তব্যের এই ‘দাদা’ কে? রাজনৈতিক মহলের মতে এই দাদা, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ছাড়া আর কেউ নন। কারণ ২০২১ সালের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনীতিতে একটা অন্যরকম ঘরানা দেখতে পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি কি নিয়ে তল্লাশি করবে? কবে কার ডাক আসতে পারে? কোন দুর্নীতিতে তদন্ত হতে পারে? কোন নেতা জেলে যেতে পারে? এইসব বিষয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভুল ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। যা দেখে রাজ্যের শাসক দল বরাবরই বলেছে যে শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশেই চলেছে রাজ্যেরবিভিন্ন ক্ষেত্রে তদন্ত।

এমনকী অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টের কপিও শুভেন্দু জনসমক্ষে এনেছেন। যা তাঁর পক্ষে আদৌ আইনত সম্ভব কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ব্যাপারে বেপরোয়ায় ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এমনকী সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে তিনি রাজ্যের বরাদ্দের উপরে কড়া নজরদারির সাজেশনও দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এমনকী ২০১৬ শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল বাতিলের হাইকোর্টের রায়ের ক্ষেত্রেও এই কাকতালীয় মিল পাওয়া গিয়েছে।

খোদ মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন, হাইকোর্টের রায় দেওয়ার আগেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কি করে এত সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করেছেন? এমনকী অনেক ক্ষেত্রেই গ্রেফতার করানোর হুমকিও দিয়েছেন শুভেন্দু। যা পরে কার্যক্ষেত্রে বাস্তবেই হয়েছে বলে দেখা দিয়েছে। নিজের প্রভাব ক্ষমতা এবং গুরুত্ব জাহির করতে গিয়ে শুভেন্দু কি ডুবিয়েছেন বঙ্গ বিজেপিকে? সুকান্তর বক্তব্যে সেরকমই ইঙ্গিত পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।

পরিকাঠামোর ব্যাপক গাফিলতিতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা, রিপোর্টে মানল রেলের সেফটি কমিশনার

বিজেপির অনেক পুরনো নেতাই মনে করেছেন, গোটা বিষয়টিতে ২০২১ সালের পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা রাজ্যের মানুষের কাছে অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাই এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, তৃণমূলের জয়রথকে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এবার খোদ রাজ্য সভাপতি গলাতেও সেই একই সুর। যদিও ভরা সভার খোলা মঞ্চে এই সহজ সরল স্বীকারোক্তির খেসারত তাঁকে দিতে হবে কী? কারণ বিজেপির কেন্দ্র হোক বা রাজ্যের নেতারা, তাঁরা বরাবরই বলেছেন যে তদন্ত কোনভাবেই রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত নয়।

দাদার কীর্তি নিয়ে দলকে হুঁশিয়ারী দিতে গিয়ে সেই বক্তব্যের ৩৬০ ডিগ্রি বিপরীতে নিজের বক্তব্য রাখলেন সুকান্ত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠলেন কেন তিনি? কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবার পরই পরই তার এই ভোলাবদলে আখেরে ভোল পাল্টে যাবে রাজ্য বিজেপি? খড়্গপুরের পরে শ্রীরামপুরেও সভা মঞ্চেও সুকান্তর পাশে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। এককালে বিস্ফোরক এবং বেপরোয়া বক্তব্যের জন্য তিনি সবসময় শিরোনামে থাকতেন। তবে আপাতত বেশ কিছুদিন তিনি কার্যত মৌনব্রত অবলম্বন করে চলেছেন।

কিন্তু তাঁর জায়গায় যেন তাঁরই ব্যাটন হাতে দৌড় শুরু করেছেন সুকান্ত। নাম না করেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যেন আক্রমণের তীর সেই শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। খড়গপুর, শ্রীরামপুর তো হল, এবার আবার কোন নতুন সভায় খড়গস্ত হবেন সুকান্ত? বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলে এখন সেই নিয়েই শোরগোল চলছে। এরই মধ্যে আগামী ১৭ তারিখে বিজেপির রাজ্য কমিটির সভা। সেখানে কি আরও বড় বোমা ফাটাবেন সুকান্ত? আশা আশঙ্কার দোলাচালে এখন বঙ্গ বিজেপিতে দোদুল্যমান পরিস্থিতি।