বিধানসভা ভোটের আগে শমীকের নতুন কর্মসূচি ‘কার্যকর্তা বন্ধুদের দরবার’

ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। আগামী বছরের শুরুতেই রাজনৈতিক ময়দানে শুরু হবে ভোটযুদ্ধের দামামা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরে নতুন উদ্যম আনতে…

West Bengal BJP Rift Widens as Conflict Between Old and New Guard Intensifies

ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। আগামী বছরের শুরুতেই রাজনৈতিক ময়দানে শুরু হবে ভোটযুদ্ধের দামামা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরে নতুন উদ্যম আনতে এবং সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya)। জুলাই মাসেই সুকান্ত মজুমদারের হাত থেকে রাজ্য বিজেপির ব্যাটন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিজেপির সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার বার্তা দিয়ে চলেছেন শমীক। এবার কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে শুরু করতে চলেছেন একটি নতুন কর্মসূচি—‘কার্যকর্তা বন্ধুদের দরবার’।

আগামী মাস থেকে শুরু হতে চলা এই কর্মসূচি প্রতি সোমবার রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তর ৬ নং মুরলিধর সেন লেনে অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিজেপির সাধারণ কর্মীরা সরাসরি দেখা করে নিজেদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারবেন শমীক ভট্টাচার্যকে। সাংগঠনিক সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা এবং সমাধানের রাস্তায় পৌঁছনোর লক্ষ্যেই এই আলাপচারিতা। দলের ভিতরে নীচুতলার অসন্তোষ এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠায় নেতৃত্ব স্তরে এই কর্মসূচিকে ‘ট্রাবলশুটিং মেকানিজম’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

   

রাজ্যে বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির চ্যালেঞ্জ বিরাট। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আর জি কর দুর্নীতি, এসএসসি কেলেঙ্কারির মতো একাধিক ইস্যুতে গত কয়েক বছরে আন্দোলন করলেও সংগঠনের ভেতরের বিভাজন দলের অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক জেলা থেকে অভিযোগ এসেছে, সাধারণ কর্মীদের কথা শোনা হয় না এবং নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই শমীক ভট্টাচার্যের এই নতুন পদক্ষেপকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

‘কার্যকর্তা বন্ধুদের দরবার’-এর মাধ্যমে দলের প্রতিটি স্তরের কর্মীরা সরাসরি সভাপতির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন। শমীক জানিয়েছেন, “বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রত্যেক কার্যকর্তা আমাদের দলের সম্পদ। তাঁদের সমস্যার কথা শোনা এবং সমাধান করা আমাদের দায়িত্ব।”

Advertisements

রাজ্যের রাজনীতিতে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি এবং তৃণমূলের লড়াই আরও হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবির কয়েকটি আসনে সাফল্য পেলেও প্রত্যাশিত ফল মেলেনি। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় সংগঠনের উপস্থিতি সীমিত। এমন পরিস্থিতিতে নিচুতলার কর্মীদের আস্থা ফেরাতে এবং ভোটের আগে দলকে সংহত করতে শমীকের এই উদ্যোগ বিজেপির পক্ষে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপির নতুন সভাপতির এই পদক্ষেপ একাধিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি সংগঠনে নেতৃত্ব এবং মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের ফাঁক তৈরি হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ভোটের আগে আস্থা পুনরুদ্ধার করা দলের জন্য জরুরি। তৃতীয়ত, শাসক তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে পা রাখার জন্য বিজেপিকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তপোক্ত হতে হবে। ‘কার্যকর্তা বন্ধুদের দরবার’ কর্মসূচি সেই লক্ষ্যেই তৈরি।

সব মিলিয়ে, বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরে নতুন উদ্যমের হাওয়া বইয়ে দিতে চাইছেন শমীক ভট্টাচার্য। এবার দেখার বিষয়, এই উদ্যোগ কতটা কার্যকরী হয় এবং বিজেপি তৃণমূলের সমানতালে লড়াই করতে পারে কিনা।