নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি (BJP vs TMC) হয়েছে। হুগলি জেলার মগরা থানার অন্তর্গত রামকৃষ্ণ সিনেমা হলের সামনে থেকে মগরা স্টেশন পর্যন্ত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’ উপলক্ষে একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। গতকাল, ২৭ জুলাই, বিকেল ৪টে থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিজেপির কর্মীরা রাস্তার দুই ধারে দলীয় পতাকা লাগিয়েছিল। কিন্তু, অভিযোগ উঠেছে যে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা বিজেপির পতাকা খুলে তাদের নিজেদের ‘ঘাসফুল’ পতাকা লাগিয়েছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার খবর পেয়ে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং মগরা থানার পুলিশও উপস্থিত হয়। বিজেপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূল কর্মীরা প্রথমে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বিজেপি নেতারা পুলিশের কাছে তৃণমূলের পতাকা অপসারণের দাবি জানায় এবং মগরা থানায় এই বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু, অভিযোগ, পুলিশ এই বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
উল্টে, গতকাল রাতে তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়কের নেতৃত্বে তাদের কর্মীরা আবারও বিজেপির পতাকার উপর নিজেদের পতাকা লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মগরা স্টেশন সংলগ্ন বিজেপির সভামঞ্চেও তৃণমূলের পতাকা লাগানো হয়েছে। এই ঘটনায় বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সভাস্থলে সমবেত হয়েছেন। বর্তমানে পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূলের পতাকা অপসারণের কাজ চলছে।
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আরেকটি উদাহরণ। বিজেপির নেতা-কর্মীরা এই ঘটনাকে তৃণমূলের ‘গুন্ডামি’ এবং ‘অগণতান্ত্রিক আচরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একজন স্থানীয় বিজেপি নেতা বলেন, “তৃণমূল জানে যে তাদের জনসমর্থন কমে যাচ্ছে। তাই তারা এই ধরনের কাজ করে আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে চায়। কিন্তু আমরা এই অত্যাচার মেনে নেব না।” অন্যদিকে, তৃণমূলের এক নেতা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “বিজেপি নিজেরাই বিতর্ক তৈরি করে জনগণের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের পতাকা লাগিয়েছে।”
শুভেন্দু অধিকারীর ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’ পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তার বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এই যাত্রার মাধ্যমে বিজেপি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নারী নিরাপত্তায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছে। কিন্তু, তৃণমূলের এই পতাকা লাগানোর ঘটনা এই কর্মসূচিকে ঘিরে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মগরায় তৃণমূলের এই কাজ প্রমাণ করে তারা বিজেপির উত্থানে ভয় পাচ্ছে।” আরেকজন লিখেছেন, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।”
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি দাবি করেছে যে তৃণমূলের এই আচরণ রাজ্যে গণতন্ত্রের পরিবেশ নষ্ট করছে। শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে বলেছেন, “তৃণমূলের এই হীন কৌশল আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা জনগণের পাশে থাকব এবং কন্যা সুরক্ষা যাত্রা সফল করব।” তিনি পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার জন্যও সমালোচনা করেছেন এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূলের নেতারা এই ঘটনাকে ‘বিজেপির নাটক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, বিজেপি এই ধরনের ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে, মগরার স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় বিভক্ত। কেউ কেউ মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক সহিংসতার পূর্বাভাস, আবার কেউ কেউ এটিকে দুই দলের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই হিসেবে দেখছেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এখনও তৃণমূলের পতাকা অপসারণের কাজ তদারকি করছে। তবে, পুলিশের প্রাথমিক নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। মগরার এই পতাকা বিতর্ক কেবল একটি স্থানীয় ঘটনা নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতিচ্ছবি। আগামী দিনে এই ঘটনার ফলাফল কী হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে রাজ্যের জনগণ।