বছর ঘুরতেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন (West Bengal assembly election)। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে লড়াই ইতিমধ্যেই সরগরম হয়েছে। কিন্তু, বাংলার পদ্ম শিবির এবার পিছিয়ে থেকেই লড়াই শুরু করছে। কারণ, বিজেপি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বুথ কমিটি তৈরি করছে না। অর্থাৎ, সংখ্যালঘুদের ছাড়াই বিধানসভা নির্বাচনের ময়দানে নামছে তারা।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রের গুরুত্ব
বাংলায় মোট ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৪১টি কেন্দ্রে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটাররা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ, এই কেন্দ্রগুলোতে সংখ্যালঘু ভোটারদের সংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি। যা মোট আসনের প্রায় অর্ধেক।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এই ১৪১টি আসনের মধ্যে ১২৬টিতে জয় পেয়েছিল। বিজেপি মাত্র ১৪টি আসনে জয়লাভ করেছিল। একটিতে জয় পেয়েছিল বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। সেই আসনটি ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর, যেখানে আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকি বিধায়ক নির্বাচিত হন।
বিজেপির নতুন কৌশল
বিজেপি এবার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বুথ কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। দলের কেন্দ্রীয় সংগঠন সম্পাদক সুনীল বনশল একটি বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই অঞ্চলগুলিতে বুথ কমিটি না করেও বাকি এলাকায় সংগঠন মজবুত করতে হবে। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু এলাকায় বুথ কমিটির জন্য অতিরিক্ত মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সেখানে সংগঠন গড়ার প্রয়োজনীয়তা এখন নেই।”
কর্মীদের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে নির্দেশ
যদিও বুথ কমিটি তৈরি হচ্ছে না, তবে বিজেপি নেতৃত্ব সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে কর্মীদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের দাবি, বুথ কমিটি না করেও এই কেন্দ্রগুলিতে ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বিজেপির দুর্বল কৌশলকেই প্রমাণ করে। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস যখন প্রতিটি বুথে শক্তিশালী সংগঠন তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে, অন্যদিকে বিজেপির এমন সিদ্ধান্ত তাদের নির্বাচনী সম্ভাবনাকে খর্ব করতে পারে।
অর্ধেক আসন ছেড়ে জয়ের আশা?
বিজেপির এই কৌশল নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন, “সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অর্ধেক আসন কার্যত ছেড়ে দিয়ে কীভাবে জয়লাভ করা সম্ভব?” বিজেপি যদিও দাবি করছে, এই আসনগুলোতেও তারা জয়ের জন্য লড়াই করবে, কিন্তু বুথ কমিটি না থাকায় সেই লড়াই কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি ভাঙার চ্যালেঞ্জ
তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রেখেছে। একুশের ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ১৪১টি আসনের মধ্যে ১২৬টিতে তাদের জয় এই বাস্তবতা আরও স্পষ্ট করে। তৃণমূলের শক্তিশালী উপস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে বিজেপিকে শিকড় স্তর থেকে সংগঠন মজবুত করতে হবে। কিন্তু বুথ কমিটি না গঠন করার সিদ্ধান্ত তৃণমূলের এই শক্তি ভাঙার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
বিজেপি ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক দুর্বলতার মুখোমুখি। বুথ স্তরে সংগঠন না থাকলে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হয় না। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বুথ কমিটি ছাড়া বিজেপির প্রচার কার্যত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
বিধানসভা ভোট ২০২৬ বিজেপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বুথ কমিটি না করার সিদ্ধান্ত তাদের কৌশলের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করছে। বাংলার নির্বাচনী লড়াইয়ে বিজেপি যে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে, তা এই পরিস্থিতি থেকেই বোঝা যায়। সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামা বিজেপির জন্য কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে।