দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) জেলার বংশীহারি ব্লকের পাথরঘাটা এলাকায় সমবায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীদের উপর মারধর ও হুমকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এই সংঘর্ষ এলাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটায় সমবায় নির্বাচনের প্রচারণা এবং ভোটগ্রহণের সময় উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা তাদের প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দিয়েছে এবং বিজেপি কর্মীদের উপর শারীরিক হামলা চালিয়েছে।
এই ঘটনায় কয়েকজন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে বংশীহারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব জানিয়েছে, তৃণমূলের এই হামলা পরিকল্পিত এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
তারা আরও দাবি করেছে যে তৃণমূল সমর্থকরা ভোটারদের ভয় দেখিয়ে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে।অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও সমবায় নির্বাচনের প্রার্থীরা জানিয়েছেন, বিজেপি কর্মীরা প্রচারের নামে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল, যার জেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাদের বচসা হয়।
তৃণমূলের দাবি, তাদের কর্মীরা কোনও হামলার সঙ্গে জড়িত নন এবং এই অভিযোগ বিজেপির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তবে, ঘটনার পর পাথরঘাটা এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে এবং এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বংশীহারি থানার পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং উভয় পক্ষের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “আমরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছি। যারা এই সংঘর্ষে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে, বিজেপির স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন যে পুলিশ প্রশাসন তৃণমূলের প্রভাবে কাজ করছে এবং তাদের অভিযোগের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
তারা তদন্তে নিরপেক্ষতার দাবি জানিয়েছে এবং ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষার অনুরোধ করেছে।দক্ষিণ দিনাজপুরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের সংঘর্ষ নতুন নয়। গঙ্গারামপুর, বালুরঘাট এবং বংশীহারির মতো এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ পেয়েছে।
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ও এই জেলায় একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, “তৃণমূলের এই গুন্ডামি আর সন্ত্রাসের রাজনীতি বন্ধ না হলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সমবায় নির্বাচনের সময় এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে ব্যাহত করছে। কেউ কেউ আবার শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের আরও কঠোর ভূমিকার দাবি জানিয়েছেন।