মিলন পণ্ডা, ভগবানপুর: পূর্ব মেদিনীপুরে সমবায় সমিতি নির্বাচনে (Cooperative Election) ফের বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ভগবানপুর ১ ব্লকের কোর্টবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব রাধাপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে তৃণমূল সমর্থিত একটিও আসন দখল করতে পারেনি। সবকটি ৯টি আসনই জয়ী হয়েছেন বিজেপি (BJP) সমর্থিত প্রার্থীরা। এই ফলাফলের পর বিজেপি শিবিরে উল্লাসের ঢেউ, অন্যদিকে অস্বস্তিতে শাসক দল।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এই সমবায় সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্র ঘিরে ছিল প্রবল উত্তেজনা। প্রতিটি আসনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া চলে। ভোট চলাকালীন কোনো অশান্তি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছিল ভগবানপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। গণনা শেষে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা একযোগে সব আসনে জয় লাভ করেন। এই জয়ের খবর পাওয়ার পর বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় উৎসব। ভগবানপুর জুড়ে গেরুয়া পতাকা নিয়ে মিছিল, আবির খেলা এবং স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছে, এই ফলাফল রাজ্যের মানুষদের রাজনৈতিক মনোভাবের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি সোমনাথ রায় বলেন,
“আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সাধারণ মানুষের আস্থা বিজেপির প্রতি ততই বাড়ছে। সমবায় সমিতির এই ফল সেই আস্থার প্রতিফলন। একের পর এক নির্বাচনে মানুষ পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছেন। ২০২৬-এ বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে মুখিয়ে রয়েছেন রাজ্যের মানুষ।”
বিজেপি শিবিরে যখন উল্লাস, তখন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই ফলাফলের গুরুত্বকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি,
“এটা প্রতীকহীন সমবায় সমিতির নির্বাচন। কোনো রাজনৈতিক প্রতীক থাকে না, তাই এই নিয়ে বিজেপি অহেতুক রাজনীতি করছে। সমবায় নির্বাচনের সঙ্গে বড় নির্বাচনের তুলনা করা ঠিক নয়।”
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গ্রামীণ বাংলায় শাসক দলের ক্রমশ জমি হারানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ফলাফল। পূর্ব মেদিনীপুর দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচন ও লোকসভা ভোটের ফলাফলেও এই জেলার বিভিন্ন ব্লকে বিজেপি ভালো ফল করেছিল। এবার সমবায় সমিতির ফলাফলও একই বার্তা দিচ্ছে।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষক সমাজে প্রভাব বিস্তারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সমবায় সমিতি। তাই এই জয়ের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতেও বিজেপি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধরণের ছোট ছোট নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য তাদের সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়িয়ে তুলছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের ভিত আরও দুর্বল হচ্ছে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
ভগবানপুরের এই নির্বাচনী ফলাফল ঘিরে এখন উত্তপ্ত পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক পরিবেশ। আগামী দিনে এই জয়ের প্রভাব কতটা বড় হবে, তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।