মিলন পণ্ডা, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি (Khejuri) ১ ব্লকে শনিবার (১৪ জুন, ২০২৫) অনুষ্ঠিত কামারদা পুঁটিমারী সমবায় সমিতির কৃষি উন্নয়ন প্রতিনিধি নির্বাচনে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা দুর্দান্ত জয় লাভ করেছে। ১২টি ডেলিগেট আসনের মধ্যে ১১টি আসনেই বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এই জয়ের মধ্য দিয়ে খেজুরিতে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক প্রভাব আরও শক্তিশালী করেছে, যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থিত প্রার্থীরা কোনও আসনে জয় পায়নি, যা এলাকায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয় শনিবার সকাল থেকে। কামারদা পুঁটিমারী সমবায় সমিতির প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। যদিও এই নির্বাচনে কোনও দলীয় প্রতীক ব্যবহৃত হয়নি, তবু তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তীব্র। উভয় দলই ১১ জন করে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে, মনোনয়ন পর্বে এসসি সংরক্ষিত একটি আসনের জন্য কোনও দলই প্রার্থী দিতে পারেনি, ফলে ওই আসনটি শূন্য থেকে যায়। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়, তবে বিজেপির তরফে অভিযোগ ওঠে যে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত কিছু দুষ্কৃতী ভোটকেন্দ্রের বাইরে জমায়েত হয়েছিল এবং এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল। তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।
বিকেলে ভোটগণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ১১টি আসনের প্রত্যেকটিতেই বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। জয়ের পর খেজুরি এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা উচ্ছ্বাসে মিছিল বের করেন। এই জয়কে বিজেপি নেতৃত্ব ‘জনগণের রায়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সহ-সভাপতি তাপস দলাই বলেন, “এই জয় মানুষের সমর্থনের ফল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছি। তবে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে কিছু দুষ্কৃতী ভোটকেন্দ্রের বাইরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জমায়েত করেছিল। আমরা কোনও গণ্ডগোলের পথে হাঁটিনি। জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন আমাদের এই জয় এনে দিয়েছে।”
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই জয়কে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ। খেজুরি ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূলের যুবনেতা শেখ জালাল উদ্দিন বলেন, “সমবায় নির্বাচনে কোনও দলীয় প্রতীক থাকে না। তাই এই জয় নিয়ে বিজেপির উল্লাসের কোনও কারণ নেই। আসল লড়াই হবে বিধানসভা নির্বাচনে। সেখানে জনগণ তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে থেকে বিজেপিকে যোগ্য জবাব দেবে।”
এই নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরি এলাকাটি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুক কেন্দ্রে বিজেপি জয়ী হলেও, রামনগরের মতো কিছু এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে, খেজুরির এই সমবায় নির্বাচনে বিজেপির এই ব্যাপক জয় তৃণমূলের জন্য একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সমবায় নির্বাচন স্থানীয় স্তরে দলীয় প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। খেজুরির এই ফলাফল বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে, এটি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য স্থানীয় স্তরে তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তারও ইঙ্গিত দেয়।
নির্বাচনের দিন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কোনও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, বিজেপির অভিযোগে উত্তেজনার আবহ তৈরি হলেও, প্রশাসনের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এই জয়ের পর বিজেপি নেতৃত্ব আশাবাদী যে, আগামী দিনে খেজুরি সহ পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যান্য এলাকায় তাদের রাজনৈতিক প্রভাব আরও বাড়বে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ফলাফলকে ‘অস্থায়ী ধাক্কা’ হিসেবে দেখছে এবং বিধানসভা নির্বাচনে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। খেজুরির এই সমবায় নির্বাচনের ফলাফল আগামী দিনে এলাকার রাজনৈতিক গতিপথে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক মহল।