মিলন পণ্ডা, কাঁথি: পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ৩ ব্লকের লাউদা গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুনন্দনপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচনে (Cooperative Election) বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা ঐতিহাসিক জয় লাভ করেছে। রবিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সমবায় সমিতির মোট ৯টি আসনের প্রত্যেকটিতেই বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের পরাজিত করে। এই জয়ের ফলে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তুঙ্গে। সকাল থেকে মারিশদা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। ভোটদান প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় এবং বিকেল তিনটার সময় গণনা শুরু হয়। গণনার ফলাফলে দেখা যায়, বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিটি আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন।
উত্তর কাঁথি বিধানসভা কাঁথি ৩ মণ্ডল সভাপতি বিপুলেশ ধাঁড়া এই জয়কে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই সমবায় সমিতি বন্ধ ছিল। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি এবং আর্থিক তছরুপের কারণে এই সমবায় সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। গ্রামের মানুষ এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন।” তিনি আরও দাবি করেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি, বিশেষ করে চাকরি সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির কারণে একাধিক নেতা-মন্ত্রীর জেলযাত্রা হয়েছে, যা জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই নির্বাচনের ফলাফল সেই ক্ষোভের প্রতিফলন বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে, জয়ী প্রার্থী কানাইলাল বর জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনের আগে একটি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি চেয়েছিলাম নির্বাচনের খরচ বাঁচাতে ৯টি আসনের মধ্যে ৪টি বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের এবং বাকি ৫টি তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের দেওয়া হোক। কিন্তু তৃণমূল এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচের বোঝা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের উপর পড়বে। তবে নির্বাচনে গ্রামের মানুষ বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ী করে তাদের পছন্দ স্পষ্ট করেছে।”
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব এই ফলাফলকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কাঁথি ৩ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র বেজ বলেন, “এই নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতীক ছিল না। দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল এবং গ্রামের মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে। এটি কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়।”
এই নির্বাচন পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নতুন আলোকপাত করেছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব এই জেলায় ক্রমশ বাড়ছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন। এরপর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির জয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও নন্দীগ্রামে বিজেপি উল্লেখযোগ্য ফলাফল করেছিল। এই সমবায় নির্বাচনের ফলাফল সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই জয়ের ফলে বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে। তারা মনে করছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে সমবায় সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং এই জয় তাদের প্রভাব আরও বাড়াবে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব এই ফলাফলকে গুরুত্ব না দিলেও, আগামী দিনে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই নির্বাচনের ফলাফল শুধুমাত্র একটি সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির জন্য নয়, বরং পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের মানুষের ভোটের মাধ্যমে প্রকাশিত এই রায় আগামী দিনে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।