বিহারে বড় জয়ের পর এবার বাংলায় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট করল বিজেপি (BJP Bengal election strategy)। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে নতুন কৌশল হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গকে ছ’টি সাংগঠনিক জোনে ভাগ করে ভিনরাজ্যের অভিজ্ঞ নেতা ও মন্ত্রীদের জেলা ধরে ধরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে সরাসরি পাল্টা লড়াই, বুথস্তরে সংগঠন মজবুত করা এবং ২০২১ সালের ভুলগুলো সংশোধন।
রাঢ় বঙ্গ (বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান): এই অঞ্চল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে বড় সাফল্য দিয়েছিল। তাই এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছত্তীসগড়ের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক পবন সাইকে। তাঁকে সহযোগিতা করবেন উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রী ধন সিং রাওয়াত। উন্নয়ন, জলসংকট ও স্থানীয় ক্ষোভ এই ইস্যুগুলিকে সামনে রেখে সংগঠন চাঙা করার লক্ষ্য দু’জনের।
হাওড়া–হুগলি–মেদিনীপুর: এই তিন জেলার প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন দিল্লি বিজেপির সংগঠন সম্পাদক পবন রানা। ঘনবসতিপূর্ণ হাওড়া ও হুগলি আলাদা করে তুলে দেওয়া হয়েছে হরিয়ানার নেতা সঞ্জয় ভাটিয়ার হাতে। দুই মেদিনীপুর—বিশেষত পূর্ব মেদিনীপুর—বিজেপির মর্যাদার লড়াই। তাই এখানকার দায়িত্ব পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী জে পি এস রাঠৌর। নন্দীগ্রাম–তমলুক বeltেকে শক্তিশালী করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা: তৃণমূলের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই এলাকায় বিজেপির সংগঠন তুলনামূলক দুর্বল। পরিস্থিতি বদলাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হিমাচল প্রদেশের সংগঠন সম্পাদক এম সিদ্ধার্থনকে। পাশাপাশি কর্ণাটকের তরুণ নেতা সিটি রবিকেও যুক্ত করা হয়েছে। মহানগর ও দক্ষিণ শহরতলির দুর্বল বুথগুলো পুনর্গঠনের দায়িত্ব তাঁদের।
নবদ্বীপ ও উত্তর ২৪ পরগণা: মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ভোটে সুবিধা তুলতে পারেনি বিজেপি। তাই এখানে দায়িত্ব পেলেন অন্ধ্রপ্রদেশের সংগঠন সম্পাদক এন মধুকর। সঙ্গে থাকছেন উত্তরপ্রদেশের অভিজ্ঞ নেতা সুরেশ রানা। মূল পরিকল্পনা মতুয়া সমাজের সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বুথ নেটওয়ার্ক বাড়ানো।
উত্তরবঙ্গ: বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরসার জায়গা উত্তরবঙ্গ। তবে সেখানে তৃণমূলের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তিত দল। মালদহের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে অরুণাচলের অনন্ত নারায়ণ মিশ্রকে। শিলিগুড়ির দায়িত্বে আছেন কর্ণাটকের অরুণ বিন্নাড়ি।
দার্জিলিং ও পাহাড়: দার্জিলিং পাহাড়ি রাজনীতির জটিল সমীকরণ মাথায় রেখে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র প্রদীপ ভান্ডারিকে। কোচবিহারের দায়িত্বে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৈলাস চৌধুরী।
বিজেপি সূত্রের দাবি, ২০২১ সালে ‘দুশো পার’ স্লোগান আগেভাগে তুলে ভুল করেছিল দল। এবার কোনও বাড়তি প্রচার নয়, বরং সবটাই চুপচাপ সংগঠন মজবুত করার উপর জোর। যে নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকে ইতিমধ্যেই জেলায় পৌঁছে কাজ শুরু করেছেন। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তাঁরা ওই এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে থেকেই বুথভিত্তিক সংগঠন শক্ত করবেন বলে জানা গিয়েছে।
