রবীন্দ্রনাথের অপমানের প্রতিবাদে উপদূতাবাস অভিযানে বিজেপি

বাংলা ও বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক, বিশ্ববন্দিত নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (rabindranath) পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত ঐতিহাসিক কুঠিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে…

rabindranath tagore controversy

বাংলা ও বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক, বিশ্ববন্দিত নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (rabindranath) পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত ঐতিহাসিক কুঠিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এই ঘটনার বিরুদ্ধে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখা কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে ‘চলো অভিযান’ নামে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।

আজ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দুপুর ৩টায় এই অভিযান শুরু হয়, যাতে দলে দলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা যোগ দিয়েছেন। এই ঘটনাকে বিজেপি ‘বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত’ হিসেবে অভিহিত করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছে।

   

ঘটনার প্রেক্ষাপট

১২ জুন ২০২৫ তারিখে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (rabindranath) পৈতৃক বাড়ি কুঠিবাড়িতে একদল দুষ্কৃতী ভাঙচুর চালায়। বিজেপির দাবি, এই হামলায় জানালা ভাঙা হয়েছে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরুদ্ধে জঘন্য স্লোগান দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনাকে বিজেপি বাংলাদেশে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর সুপরিকল্পিত আক্রমণ হিসেবে দেখছে। বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র ড. সম্বিত পাত্র এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশ, দুই দেশেরই জাতীয় সঙ্গীত লিখেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(rabindranath)। কবিগুরুর পৈতৃক বাড়ি আজ জিহাদি আক্রমণের শিকার।”

বিজেপি (rabindranath)আরও দাবি করেছে, এই ঘটনা শুধু একটি ভবনের উপর আক্রমণ নয়, বরং রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারা ও বাঙালি সংস্কৃতির অস্তিত্ব মুছে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর—শুধু নাম নয়, এঁরা আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। বাংলাদেশে ঠাকুর পরিবারের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস হচ্ছে নীরবে, আর পশ্চিমবঙ্গেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।”

বিজেপির প্রতিবাদ কর্মসূচি

এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে একটি বৃহৎ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “বিশ্ববন্দিত নোবেলজয়ী বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির আত্মা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (rabindranath) অস্তিত্ব মুছে ফেলার বিরুদ্ধে বিজেপির ডাকে আগামীকাল ১৬ই জুন, ২০২৫, বাংলাদেশ উপদূতাবাস অভিযানে দলে দলে যোগদিন। জমায়েত স্থান: শিয়ালদহ স্টেশন, সময়: দুপুর ৩টা।”

একইভাবে, দিল্লিতেও বিজেপি একটি সমান্তরাল প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দিল্লি বিজেপির রাজ্য সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবা ১৬ জুন বিকেল ৩:৪৫-এ তিন মূর্তি চক থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দিকে একটি প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিজেপি নেতারা এই ঘটনাকে ‘নৈতিকতার উপর আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, বাংলাদেশে ঠাকুর (rabindranath) পরিবারের স্মৃতিচিহ্নের উপর আক্রমণ বাঙালি সংস্কৃতি এবং ভারতের ঐতিহ্যের উপর একটি সরাসরি আঘাত। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন কবি নন, তিনি বাঙালির আত্মপরিচয়।

তাঁর স্মৃতিচিহ্নের উপর আক্রমণ বাঙালি সংস্কৃতির অস্তিত্ব মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র।” তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এই ধরনের ঘটনাকে উপেক্ষা করছে, যা তাদের হিন্দুবিরোধী মানসিকতার প্রমাণ।”

Advertisements

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার নিন্দা করলেও বিজেপির প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ হিসেবে সমালোচনা করেছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি সব বিষয়ে সাম্প্রদায়িক রঙ লাগিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়।

বাংলাদেশের ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত, কিন্তু বিজেপি এটিকে ভোটের রাজনীতির জন্য ব্যবহার করছে।” তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাঙালি সংস্কৃতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিজেপির মতো বিভাজনমূলক রাজনীতি আমরা করি না।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। বিজেপি দাবি করেছে, এটি ‘জিহাদি’ গোষ্ঠীর কাজ, যারা বাঙালি সংস্কৃতি এবং ঠাকুর পরিবারের ঐতিহ্য ধ্বংস করতে চায়। তবে, বাংলাদেশের স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে উল্লেখ করেছে এবং তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিছু সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার পিছনে স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও থাকতে পারে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা এবং বিজেপির প্রতিবাদ কর্মসূচি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ অনেকে বিজেপির প্রতিবাদকে সমর্থন করে বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (rabindranath) আমাদের গর্ব। তাঁর স্মৃতিচিহ্নের উপর আক্রমণ সহ্য করা যায় না।” অন্যদিকে, কেউ কেউ বিজেপির এই কর্মসূচিকে ‘ভোটের রাজনীতি’ বলে সমালোচনা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “বিজেপি শুধু সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায়। এই ঘটনার তদন্ত হোক, কিন্তু রাজনীতি বন্ধ করা উচিত।”

‘মন্দিরে গরুর মাংস কাণ্ড বিজেপির ষড়যন্ত্র’, দাবি গগৈয়ের

রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনা এবং বিজেপির প্রতিবাদ ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করতে পারে। বিজেপি এই ঘটনাকে বাঙালি সংস্কৃতি এবং হিন্দু ঐতিহ্যের উপর আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরে জনমত গড়ার চেষ্টা করছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “হিন্দু বাঙালিদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।”

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে বিজেপির ‘বিভাজনমূলক রাজনীতি’র অংশ হিসেবে দেখছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলার হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, যা বিজেপির জন্য রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।

বিজেপির ‘বাংলাদেশ উপদূতাবাস চলো অভিযান’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (rabindranath) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ। এই ঘটনা বাঙালি সংস্কৃতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপির এই কর্মসূচি যেমন জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি এটি রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। তদন্তের ফলাফল এবং এই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হবে, তা সময়ই বলবে।