বিধানসভায় উত্তরবঙ্গকে (North Bengal State) আলাদা রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সরব হলেন বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাজ্য বাজেট নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় এই দাবি তোলেন তিনি। তার মতে, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে রাজ্য সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাই উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের দায়িত্ব সেখানকার মানুষদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
শিখা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন করতে ব্যর্থ এই সরকার। উন্নয়ন করতে না পারলে উত্তরবঙ্গকে আপনাদের ছেড়ে দিন। সেখানকার মানুষ নিজেদের উন্নয়নের দায়িত্ব নেবে।’ তার এই বক্তব্যটি বিধানসভায় তীব্র আলোচনা তৈরি করেছে। শিখা দেবী আরও জানান, উত্তরবঙ্গের মানুষের উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।
এদিন বিধানসভা থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ১৪ বছর ধরে তৃণমূল সরকার উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু সেইসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।’ তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও সংকটের মধ্যে রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরকন্যা নামে একটি বাড়ি তৈরি করে সেখানে দ্বিতীয় নবান্ন তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, সেই এলাকায় সরকারি কোনও আমলা নেই, যা উত্তরবঙ্গের মানুষের অবহেলার চিত্র তুলে ধরে।
শিখা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, উত্তরবঙ্গের মানুষ নিজের উন্নয়ন নিজেই করতে পারে। এর আগে অন্য বিজেপি বিধায়করা একই ধরনের দাবি তুলেছিলেন। শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ এবং কালিম্পংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ রাইও উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা মর্যাদার দাবি করেছেন। যদিও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের মুখ খুলতে নিষেধ করেছে, তবুও শিখা চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।
এই দাবির প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, উত্তরবঙ্গের আলাদা রাজ্যের দাবি রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। তবে শিখা চট্টোপাধ্যায় এবং অন্য বিজেপি বিধায়কদের এমন দাবির পরে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
উত্তরবঙ্গের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই অঞ্চলে পাহাড় সুন্দরবনসহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। যদিও এই সমস্ত এলাকায় উন্নয়ন হলেও সাধারণ মানুষ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। শিখা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি অনুসারে, যদি উত্তরবঙ্গের মানুষ নিজেদের উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে পারে, তবে রাজ্য সরকারের কাছে আরও বেশি জবাবদিহি করতে হবে।
এছাড়া, বিজেপি নেতাদের এমন দাবি রাজ্য রাজনীতির পটভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া হতে পারে বিজেপির পক্ষ থেকে। বিজেপি রাজ্যে বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলন করতে প্রস্তুত, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।
শিখা চট্টোপাধ্যায়ের আলাদা রাজ্যের (North Bengal State) দাবি নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে। শিখা চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য রাজ্য রাজনীতির জন্য এক নতুন মাইলফলক হতে পারে।