ওডিশায় সোনা চুরিতে ধৃত বিজেপি নেতার মেদিনীপুরেও প্রতারণার জাল

শান্তনু পান, মেদিনীপুর: ওডিশার জলেশ্বরে একটি সোনার দোকান থেকে প্রায় ১০০ গ্রাম সোনা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি যুব মোর্চার নেতা সোমনাথ সাহু…

BJP Leader Somnath Sahu Arrested for Gold Theft in Odisha, Faces Fraud Allegations in Medinipur

শান্তনু পান, মেদিনীপুর: ওডিশার জলেশ্বরে একটি সোনার দোকান থেকে প্রায় ১০০ গ্রাম সোনা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি যুব মোর্চার নেতা সোমনাথ সাহু (Somnath Sahu)। শুধু চুরির অভিযোগই নয়, মেদিনীপুর জুড়ে সোনা নিয়ে প্রতারণার একটি বড় জাল বিস্তার করেছিলেন বলে উঠে এসেছে একাধিক অভিযোগ। সোমনাথের বিরুদ্ধে মেদিনীপুরের কোতয়ালি থানায় ইতিমধ্যেই একটি FIR দায়ের করেছেন স্থানীয় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিতর্কও তৈরি হয়েছে, যা বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র শাব্দিক সংঘর্ষের কারণ হয়ে উঠেছে।

মেদিনীপুর শহরের পাটনাবাজারের আগুনভাঙার চকে সোমনাথ সাহুর একটি সোনার দোকান ছিল, যার নাম ‘স্বস্তিক জুয়েলারি’। কাছাকাছি ভোলাময়রার চকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রশান্ত জানার গয়না তৈরির একটি কারখানা রয়েছে। প্রশান্ত জানার অভিযোগ, সোমনাথ নিয়মিত তার কারখানা থেকে গয়না নিয়ে যেতেন এবং এর বিনিময়ে মূল্য পরিশোধ করতেন। কিন্তু ২০২১ সালের জুন মাসে সোমনাথ প্রায় ৯৫ গ্রাম সোনার গয়না নেন, কিন্তু তার জন্য কোনও টাকা পরিশোধ করেননি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কয়েকদিনের মধ্যে টাকা মিটিয়ে দেবেন, কিন্তু তারপর থেকে তিনি প্রশান্তকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। প্রশান্ত আরও জানান, সোমনাথ বিজেপির যুব মোর্চার নেতা হওয়ায় তিনি স্থানীয় দুই বিজেপি নেতার কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও সমাধান পাননি।

   

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে সোমনাথ একটি কালো স্করপিও গাড়িতে করে জলেশ্বরের একটি সোনার দোকানে যান। ক্রেতা সেজে দোকানে প্রবেশ করে তিনি গয়না দেখতে শুরু করেন এবং সুযোগ বুঝে প্রায় ১০০ গ্রাম সোনা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয়রা তাকে ধরে ফেলে এবং পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সিসিটিভি ফুটেজে সোমনাথের চুরির দৃশ্য ধরা পড়েছে, যা এই ঘটনার অন্যতম প্রমাণ হিসেবে পুলিশের হাতে রয়েছে। এই ঘটনার পর শনিবার (২৮ জুন) সংবাদমাধ্যমে সোমনাথের গ্রেফতারির খবর প্রকাশিত হলে প্রশান্ত জানা তৎক্ষণাৎ কোতয়ালি থানায় গিয়ে সোমনাথ ও স্থানীয় দুই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে FIR দায়ের করেন। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই FIR-এর বিষয়টি সোমবার নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সোমনাথের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি প্রকাশ করে দাবি করেছে, তিনি বিজেপির যুব মোর্চার জেলা সম্পাদক ছিলেন। তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “বিজেপির নেতারা অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছে। সোমনাথের চুরির দৃশ্য সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে।” অন্যদিকে, বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অরূপ দাস জানিয়েছেন, সোমনাথের সঙ্গে দলের কোনও যোগাযোগ গত দেড় বছর ধরে ছিল না। তিনি আরও বলেন, “ওডিশায় বিজেপি সরকার কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে, এটা প্রশংসনীয়।”

Advertisements

এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, সোমনাথের মতো একজন রাজনৈতিক নেতার এই ধরনের কাজে জড়িত থাকা রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে। পুলিশ এই মামলার তদন্ত শুরু করেছে এবং সোমনাথের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের বিষয়ে গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।