ভারত ও বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় (voter list controversy) একই ব্যক্তির নাম উঠে আসায় নতুন করে তীব্র রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত লাগোয়া স্বরূপনগরে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিজেপির বিথারি-হাকিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০০ নম্বর বুথের নির্বাচিত সদস্য সুভাষচন্দ্র মণ্ডল। বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসার পর থেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক, একে অপরকে নিশানা করতে শুরু করেছে শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপি।
ঘটনার সূত্রপাত সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার রুদ্রপুর ভোটার তালিকায়। ওই তালিকার ৩৬১ নম্বরে ‘সুভাষচন্দ্র মণ্ডল’ নামে এক ব্যক্তির নাম নথিবদ্ধ রয়েছে। ভোটার এলাকার কোড ০০৫৫। নাম, ঠিকানা এবং পরিচয় মিলিয়ে দেখা যায় তালিকাটি বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য সুভাষ মণ্ডলের সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ তোলে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য আসলে বাংলাদেশি নাগরিক, অথচ তিনি ভারতের ভোটার তালিকায় নাম তুলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এই অভিযোগের পর সুভাষচন্দ্র মণ্ডল স্বীকার করেন, “আমার ছোটবেলার বাড়ি বাংলাদেশে। কিন্তু আমি বহু বছর আগে এ দেশে চলে এসেছি। বাংলাদেশের তালিকায় কেন নাম আছে, বলতে পারব না।” তাঁর এই স্বীকারোক্তিতে রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও কয়েক ডিগ্রি বেড়েছে। তৃণমূলের দাবি, সুভাষ মণ্ডলের ভারতীয় নাগরিকত্ব বৈধ কিনা তা অবিলম্বে খতিয়ে দেখা উচিত, এবং প্রমাণ না মিললে তাঁর পঞ্চায়েত সদস্যপদ বাতিল করা প্রয়োজন।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের স্বরূপনগর উত্তর ব্লক সভাপতি জিয়াউর রহমান তীব্র ভাষায় বলেন, “বিজেপি অনুপ্রবেশ নিয়ে বড় বুলি আওড়ায়। অথচ তাদের দলের পঞ্চায়েত সদস্যই বাংলাদেশি ভোটার। এটাই প্রমাণ করে বিজেপির দ্বিচারিতা।” তিনি প্রশাসনের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপি এই ঘটনা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়লেও দলের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষায় নামেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “অনেক মানুষ আছেন যাঁদের ওপারেও ভোটার লিস্টে নাম আছে, এপারেও আছে। বিশেষ করে হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাঁরা সিএএ-র মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।” তাঁর মন্তব্যে স্পষ্ট যে বিজেপি এই ঘটনার রাজনৈতিক ক্ষতি ঠেকাতে সিএএ আইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরতে চাইছে।
অন্যদিকে, ভারতের ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএলও সুমন মণ্ডল জানিয়েছেন, “আমি সুভাষবাবুকে এনুমারেশন ফর্ম দিয়েছি, তবে তিনি এখনও তা জমা দেননি। জমা পড়লে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বৈধ নথি ছাড়াই কীভাবে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারলেন?
স্থানীয় জনমহলে এই ঘটনা নিয়ে প্রবল আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে বিজেপি বারবার অভিযোগ তুললেও নিজেদের দলের প্রতিনিধিকে নিয়ে এমন বিস্ফোরক তথ্য বাইরে আসায় গেরুয়া শিবিরে চাপ বাড়ছে। প্রশাসনের কাছেও দাবি উঠেছে দুই দেশের ভোটার তালিকায় কীভাবে একই ব্যক্তির নাম রেজিস্টার্ড হলো, তা তদন্ত করা প্রয়োজন।
এই ঘটনার পর নাগরিকত্ব যাচাই, ভোটার তালিকা সংশোধন এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করার দাবি আরও জোরালো হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিষয়টি শুধু দলীয় লড়াই নয়, বরং দুই দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
