তৃণমূল কর্মীদের ও বৃহনল্লাকে মারধর-ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার বিজেপি নেতা

মিলন পণ্ডা, খেজুরি: রাতে বাড়ি ফেরার সময় বৃহনল্লা ও বন্ধু যুবককে মারধর, ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান (BJP leader arrested)। পূর্ব মেদিনীপুর…

মিলন পণ্ডা, খেজুরি: রাতে বাড়ি ফেরার সময় বৃহনল্লা ও বন্ধু যুবককে মারধর, ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান (BJP leader arrested)। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি ২ ব্লকের নিচ কশবা গ্রাম পঞ্চায়েতের হিজলি যাওয়া পথে মিশ্র মোড় এলাকায় ঘটনা।

Advertisements

খবর ছড়িয়ে পড়তে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তালপার্টি উপকুল থানায় পুলিশ জানিয়েছে ধৃতের নাম তারাপদ মণ্ডল। তার বাড়ি তালপার্টি উপকুল থানায় নিচ কশবা পূর্ব গ্রামে। ধৃত তারাপদ নিচ কশবা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। মঙ্গলবার ধৃতকে কাঁথি আদালতে তোলা হয়। বিচারক তার ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

   

তালপার্টি উপকুল থানায় ওসি কাজল বর্মন বলেন, “অভিযোগে ভিওিতে তারাপদ’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে স্বার্থে হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ বিজেপির নেতার এই কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্বরা। যদিও পাল্টা বিজেপি নেতাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতৃত্বরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে শেরখাঁচকে বাসিন্দা এক বৃহনল্লা বাড়িতে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে গিয়েছিল দক্ষিণ অলিচক গ্রামে এক যুবক কৃষ্ণেন্দু পাত্র। ওই বৃহন্নলা কৃষ্ণেন্দু’র বন্ধবী। রাত ১১ টা নাগাদ নিমন্ত্রণ শেষ করে বাইকে করে বাড়ি ফিরছিল দু’জন। হিজলি যাওয়ার পথে মিশ্র মোড়ের কাছে কৃষ্ণেন্দুর বাইক আটকায় উপপ্রধান তারাপদ মণ্ডল সহ বেশ কয়েকজন যুবক বলে অভিযোগ। এমনকি বৃহনল্লা বাইক থেকে নামানোর জন্য হাত ধরে টানাটানি করে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে কৃষ্ণেন্দু পাত্রকে বাইক থেকে নেমে রাস্তার উপর ফেলে বেধড়ক মারধর করে। চড়াও হয় উপপ্রধান তারাপদ মণ্ডল সহ বেশ কয়েকজন যুবক বলে অভিযোগ।

ওইদিন ঠিক সন্ধ্যা ৯ টা নাগাদ অন্য এক তৃণমূল কর্মী সমরেশ সাহু উপর চড়াও হয় বলে তারাপদ মণ্ডল দলবল বলে অভিযোগ। ওই তৃণমূল কর্মীর সমরেশ এর কাছ থেকে নগদ ২৭ হাজার টাকা ও হাতে থাকা দুটি সোনার আংটি জোরপূর্বক কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ। চুরি যাওয়া দুটি সোনার আংটি আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। এরপর রাত ১১ টা নাগাদ পুনরায় আর এক তৃণমূল কর্মী কৃষ্ণেন্দু পাত্রর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এর কাছ থেকে নগদ ৭৪০০ টাকা ও হাতে থাকা একটি সোনার আংটি জোরপূর্বক কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ। চুরি যাওয়া একটি সোনার আংটি আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৮ হাজার টাকা।

এমনকি তার বান্ধবী মানিব্যাগ কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ। পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় সমরেশ সাহু ও কৃষ্ণেন্দু পাত্রকে স্থানীয় শিলাবেরিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর দুজনকে ছেড়ে দেন চিকিৎসক। রাতেই তালপার্টি উপকূল থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ রাতেই অভিযুক্ত প্রধান তারাপদ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে।

বিজেপি পরিচালিত উপ্রধানের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার হয়ছেন তৃণমূল নেতৃত্বরা। পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল নেতা সেক দিদার আলি বলেন, “উপপ্রধান তথা বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। নিজের দলের লোকেরাও তারাপদ মণ্ডল’কে মেরে হাত পা ভেঙে দিয়েছিল। উপপ্রধান হয়ে মদ খেয়ে এলাকায় মস্তানি করছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। রাস্তায় সাধারণ মানুষ ওর জন্যই চলাফেলা করতে পারছে না৷”

স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নিচ কশবা অঞ্চল সভাপতি সমীরণ দাস বলেন ” উপপ্রধান হওয়ার কারণেই এলাকায় দাপাদাপি করেন। লুটপাট থেকে তোলাবাজি সবকিছুতেই সিদ্ধহস্ত। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি”।

যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতৃত্বরা। খেজুরি ২ ব্লকের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা পবিত্র দাস বলেন, “বিজেপি দলীয় পতাকা উপর তৃণমূল কর্মীরা অশ্লীল আচরণ করেছিল। এনিয়ে তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে বচসা হয়েছিলে উপপ্রধান। প্রতিবাদ করার জন্যই মিথ্যা মামলা খেতে হল৷”