সৌমিত্র-সুকান্তের জয়েও গরমিলের অভিযোগ! ৭৯ সিটের রিপোর্ট ফাঁসে ‘মহাবিপদে’ মোদী?

২৪-এর লোকসভায় বঙ্গে বিজেপির (BJP) আশানুরূপ ফল হয়নি। বিজেপির (BJP) সৌমিত্র খাঁ যতই বলুন, ফলাফল ঠিকঠাক রয়েছে, কিন্তু বাস্তব চিত্র আসলে এটাই, দাবি বিশেষজ্ঞদের। ২০১৯-এর…

২৪-এর লোকসভায় বঙ্গে বিজেপির (BJP) আশানুরূপ ফল হয়নি। বিজেপির (BJP) সৌমিত্র খাঁ যতই বলুন, ফলাফল ঠিকঠাক রয়েছে, কিন্তু বাস্তব চিত্র আসলে এটাই, দাবি বিশেষজ্ঞদের। ২০১৯-এর ১৮ আসন থেকে ২০২৪-এ এসে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ টিতে। কিন্তু এবার অভিযোগ উঠেছে সেই জয়ের কৃতিত্ব বিজেপির (BJP) একার নয়! নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ মদতেই তাহলে কি এই জয়? অন্তত প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে এই সম্ভাবনার জোরালো ইঙ্গিতই দিচ্ছে কেন্দ্রের বিরোধী শিবির ।

মহারাষ্ট্রের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভোট ফর ডেমোক্রেসি’ তাদের রিপোর্টে এক মারাত্মক ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫ টি রাজ্যের ৭৯ টি বিধানসভাতে গরমিলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যার জন্য তারা মূলত দায়ী করেছেন ইলেকশন কমিশনকেই। প্রাথমিক ভোট শতাংশের রিপোর্টের সঙ্গে ইলেকশন কমিশনের ফাইনাল ভোট পার্সেন্টেজের তফাৎকেই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। দেশের এই ১৫ টি রাজ্যে ৭৯টি কেন্দ্রে গড়ে ৫ শতাংশ ভোট পার্সেন্টেজ পরে বাড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। লোকসভা ভোট চলাকালীনই যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

   

মজার বিষয় হল এই ৭৯ টি কেন্দ্রের মধ্যে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির দখলে থাকা ১০ টি কেন্দ্রও আছে। আর তার থেকেও অবাক করা বিষয়, এই ৭৯ টা কেন্দ্রের বেশিরভাগটাই গিয়েছে এনডিএ শিবির বা বিজেপির ঝুলিতে। তার মধ্যে আবার অনেকগুলো আসনই একেবারে অল্প মার্জিনে জিতেছেন বিজেপির প্রার্থীরা।

এই রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে, নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত ভোটদানের হারের মধ্যে তফাৎ প্রায় ৪.৮৩ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবেই গোটা রাজ্য জুড়ে যেটা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩৬ লক্ষ ৭২ হাজারের কাছাকাছি ভোট। রাজ্যের ৪২ কেন্দ্রে গড় হিসেবে প্রায় ৮৬ থেকে ৮৭ হাজারের কাছাকাছি ভোট বেড়ে গিয়েছে। ভোট ফর ডেমোক্রেসির রিপোর্ট অনুযায়ী এই বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়েছে বালুরঘাট, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর, বনগাঁ, রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর, আলিপুরদুয়ার, তমলুক, কাঁথির মত আসন গুলিতে। ঘটনাচক্রে এই সবকটি আসনই বিজেপি প্রার্থীদের জেতা।

এর মধ্যে লক্ষ্যণীয়ভাবে বালুরঘাট এবং বিষ্ণুপুর আসন নিয়ে বারবার অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বালুরঘাট থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জিতেছেন মাত্র ১০,৩৮৬ ভোটে। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু অংকের হিসেবে দেখা যাচ্ছে এই ৫ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি না হলে ফলাফল অন্যরকম হতেই পারত। লোকসভা ভোটের গণনার দিন রীতিমতন নাগরদোলার মতোই অবস্থা ছিল এই কেন্দ্রের রিপোর্ট নিয়ে। কখনো তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র, তো কখনো বিজেপির সুকান্ত, এগিয়ে যাওয়ার অঙ্কে দুজনের মধ্যে লড়াই হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি। গননা কেন্দ্রে বিস্তর কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ সুকান্ত মজুমদারও। শেষমেষ ১০ হাজার ভোটে জিতে শেষ হাসি হেসেছেন তিনি।

যদিও সেসময় তাঁর এই জয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীই। অপরদিকে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ জিতেছেন মাত্র ৫৫৬৭ ভোটের ব্যবধানে। ৫ শতাংশের বেড়ে যাওয়াতে এখানেও কোনো বড়সড় প্রভাব পড়েছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে বলেই দাবি। মজার বিষয় এখানেও গণনার দিন গণনা কেন্দ্রের বাইরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। যদিও আপাতত জয়ী সাংসদের তালিকায় সৌমিত্রর নাম জ্বলজ্বল করছে। এছাড়াও প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তমলুক, শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর কাঁথি বা আরেক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বনগাঁর নামও এই তালিকাতে রয়েছে। জানিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে।

বঙ্গ বিজেপির জয়ী হেভিওয়েট প্রার্থীদের জয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। অপরদিকে ভোট ফর ডেমোক্রেসির দাবি নিয়ম বিরুদ্ধে ভাবে অনেক দেরি করে চূড়ান্ত ভোট শতাংশের রিপোর্ট পেশ করেছেন নির্বাচন কমিশন। যা কিনা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কার্যত অবমাননা। এমনকী এই রিপোর্টের যদি সত্যতা থাকে, তাহলে হয়ত ভারতবর্ষের তৃতীয়বারের জন্য মোদি সরকার গঠিত নাও হতে পারত।

তাই আপাতত শুধু বাংলার রাজনীতি নয় দেশের রাজনীতিতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে এই ভোট ফর ডেমোক্রেসির রিপোর্ট। ইন্ডিয়া ব্লকের এতদিনের দাবিকেই ঘুরিয়ে সমর্থন করছে। তৃণমূল কংগ্রেস কংগ্রেস সহ একাধিক বিজেপি বিরোধী দলগুলির দাবি নির্বাচন কমিশন এই রিপোর্ট সম্পর্কে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার ভাবে জানাক। আগামী দিনে এই রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে হয়ত ভারতীয় রাজনীতির অনেক চেনা অঙ্ক বদলে যেতেও পারে। ক্ষেত্রে ভারতীয় রাজনীতির মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ বলে ধরে নেওয়া হবে এই রিপোর্টকে।

রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। আপাতত অঙ্কতে যা অসম্ভব বলে মনে হয়, রাজনীতির দুনিয়ায় অনেক সময় সেই অসম্ভবই চোখের সামনে বাস্তব ‘সম্ভবে’ পরিণত হয়েছে। তৃণমূল সুপ্রিমো থেকে শুরু করে একাধিক বিরোধী নেতা নেত্রীরা বারবার বলছেন মোদী সরকার বেশিদিন টিকবে না। তাঁরা কী তাহলে অদূর ভবিষ্যতের কোন বড়সড় খেলার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন? এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না কোনওমতেই।