শুভেন্দু -গড়ে বিজেপিতে ভাঙন! ২০ সক্রিয় পরিবারের তৃণমূলে যোগ

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) গড়ে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের…

BJP Faces Setback in Suvendu Adhikari’s Stronghold as 20 Active Families Join TMC

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) গড়ে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পঁচেট গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দনপুর গ্রামে প্রায় ২০টি সক্রিয় পরিবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ এটি শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাবশালী রাজনৈতিক এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। নবাগত বিজেপি সদস্যদের হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পীযূষ কান্তি পণ্ডা। এই যোগদানের ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি আরও মজবুত হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

পটাশপুর ২ নম্বর ব্লকের পঁচেট গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দনপুর গ্রামের উত্তর-পূর্ব বুথে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সাংগঠনিক কর্মীসভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পটাশপুর ২ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি পীযূষ কান্তি পণ্ডা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক এবং অন্যান্য তৃণমূল নেতা ও কর্মী-সমর্থকেরা। সভায় নির্মল মণ্ডলের নেতৃত্বে প্রায় ২০টি সক্রিয় বিজেপি পরিবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করে। এই ঘটনা তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিজেপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকেও প্রকাশ করেছে।
পীযূষ কান্তি পণ্ডা এই যোগদান প্রসঙ্গে বলেন, “২০টি সক্রিয় বিজেপি পরিবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সকলে মিলে মানুষের উন্নয়নে কাজ করব। এই যোগদান তৃণমূলের শক্তি আরও বাড়িয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই ধরনের যোগদান পটাশপুরে তৃণমূলের জনসমর্থন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয় এবং আগামী দিনে দল আরও শক্তিশালী হবে। তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির উপর কটাক্ষ করে বলেছে, “শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে এই ভাঙন বিজেপির দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোর প্রমাণ। মানুষ এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।”

   

অন্যদিকে, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব এই যোগদানকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ। তারা দাবি করেছে, “যারা তৃণমূলে যোগ দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা বিজেপির কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল না। এটি তৃণমূলের একটি নাটকীয় প্রচারণা মাত্র।” বিজেপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “এই ধরনের দলবদল রাজনীতিতে স্বাভাবিক ঘটনা। এতে দলের মূল শক্তির কোনও ক্ষতি হবে না। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজ অব্যাহত রাখব।”

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পটাশপুর আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী উত্তম বারিক জয়ী হন। তিনি বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে উত্তম বারিক তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে এই আসনে জয়ী হন বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র পটাশপুর বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস লিড পেয়েছিল, বাকি ছয়টি বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে ছিল। এই প্রেক্ষাপটে পটাশপুরে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি বিজেপির জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Advertisements

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেস ধীরে ধীরে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করছে। পটাশপুরে এই যোগদান তৃণমূলের কৌশলগত সাফল্যের একটি উদাহরণ। বিশেষ করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি, যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, ও স্বাস্থ্য সাথী, গ্রামীণ এলাকায় জনসমর্থন বাড়িয়েছে। এই প্রকল্পগুলির প্রভাবে সাধারণ মানুষ তৃণমূলের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ঘটনা শুভেন্দু অধিকারীর জন্য রাজনৈতিকভাবে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির প্রধান মুখ হিসেবে পরিচিত। তবে তৃণমূলের এই ধরনের সাংগঠনিক প্রচেষ্টা এবং দলবদল বিজেপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করছে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ধরনের ঘটনা তৃণমূলের পক্ষে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই যোগদানের ঘটনা রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনার সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব মনে করছে, এই ধরনের দলবদল তাদের দলের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং দুর্বলতাকে প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনাকে তুচ্ছ করে তাদের সাংগঠনিক কাজ অব্যাহত রাখার কথা বললেও, পটাশপুরের এই ঘটনা তাদের জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে কাজ করছে। আগামী দিনে পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক সমীকরণ কীভাবে গড়ে ওঠে, তা দেখার বিষয়।