নন্দীগ্রামে আবারও ঘাসফুল উপড়ে ফেলে জয়ী পদ্ম শিবির

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে নন্দীগ্রাম সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে (Nandigram)। এই বিধানসভা কেন্দ্রে, যেখানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে…

Nandigram

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে নন্দীগ্রাম সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে (Nandigram)। এই বিধানসভা কেন্দ্রে, যেখানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী জয়লাভ করেছিলেন, সেখানে আবারও পদ্মফুলের জয়ের ধারা অব্যাহত রইল।

নন্দীগ্রাম ১ নং ব্লকের সোনাচূড়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড-এর পরিচালন সমিতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীরা ১২-০ ফলাফলে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করে নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে এনেছে। এই জয়ের মধ্য দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর নিজের গড়ে বিজেপির প্রভাব আরও সুসংহত হল।নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে।

   

গেরুয়া আবির আর ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে এলাকা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই জয়ের জন্য ভোটদাতা সমবায়ী বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষ আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি আস্থাশীল।

সোনাচূড়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের নিরঙ্কুশ জয় আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি নির্বাচিত সকল সদস্যদের জাতীয়তাবাদী গৈরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।”এই নির্বাচনে সোনাচূড়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মোট ১২টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা সবকটি আসনে জয়লাভ করেছে, অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও আসনেই খাতা খুলতে পারেনি। এই ফলাফল তৃণমূলের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে এমন একটি সময়ে যখন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নন্দীগ্রামে বিজেপির এই জয় শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বের শক্তি এবং এলাকায় দলের সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ। শুভেন্দু অধিকারী দীর্ঘদিন ধরে নন্দীগ্রামের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ২০২১ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এই কেন্দ্র থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন।

তারপর থেকে নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সমবায় নির্বাচনের এই ফলাফল সেই ধারাবাহিকতারই প্রতিফলন।তৃণমূলের নেতৃত্ব এই পরাজয়ের পর কিছুটা হতাশ হলেও তারা এই ফলাফলকে বিধানসভা নির্বাচনের প্রতিফলন হিসেবে দেখতে নারাজ। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা স্বদেশ দাস বলেন, “সমবায় নির্বাচনের ফলাফল স্থানীয় ইস্যুর উপর নির্ভর করে।

এটি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে তুলনীয় নয়। আমরা আগামী দিনে আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে আসব।” তবে, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সংগঠনের দুর্বলতা এই পরাজয়ের পেছনে একটি বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব এই জয়কে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে।

Advertisements

বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষ তৃণমূলের শাসনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। এই জয় প্রমাণ করে যে মানুষ বিজেপির জাতীয়তাবাদী নীতির প্রতি আকৃষ্ট। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরা আরও বড় ব্যবধানে জয়ী হব।”নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসে সমবায় নির্বাচনগুলি সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এই নির্বাচনগুলি স্থানীয় স্তরে দলগুলির শক্তি পরীক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। সোনাচূড়া সমবায় নির্বাচনে বিজেপির এই নিরঙ্কুশ জয় তৃণমূলের জন্য একটি সতর্কতার ঘণ্টা। আগামী দিনে তৃণমূল কীভাবে এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে এবং নন্দীগ্রামে তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এই জয়ের পর শুভেন্দু অধিকারী আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন।

তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষ আমার উপর ভরসা রেখেছে। আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এই জয় শুধু বিজেপির নয়, নন্দীগ্রামের মানুষের জয়।” তবে, রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে আরও তীব্র লড়াই হবে। তৃণমূল এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

নন্দীগ্রামের এই সমবায় নির্বাচনের ফলাফল আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিজেপির এই জয় শুধু নন্দীগ্রামেই নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যান্য এলাকাতেও তাদের মনোবল বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ।

উৎসবের মরসুমে গাড়ি লোনে বিশেষ ছাড় ঘোষণা ব্যাংক অব বরোদার

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়, সেটাই এখন রাজনৈতিক মহলের আলোচনার বিষয়।