মুর্শিদাবাদ সাম্প্রদায়িক হিংসায় রাম-বাম তরজা শুরু

BJP-CPM Clash Over Communal Violence in Murshidabad মুর্শিদাবাদ (murshidabad) জেলার সামশেরগঞ্জ ব্লকের জাফরাবাদে শ্রী হরগোবিন্দ দাস ও তার পুত্র শ্রী চন্দন দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে…

bjp-cpm-clash-murshidabad-communal-violence

BJP-CPM Clash Over Communal Violence in Murshidabad

মুর্শিদাবাদ (murshidabad) জেলার সামশেরগঞ্জ ব্লকের জাফরাবাদে শ্রী হরগোবিন্দ দাস ও তার পুত্র শ্রী চন্দন দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে শুরু হয়েছে বিজেপি সিপিআইএম তরজা। তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক ও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঝড় উঠেছে এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

গত ১২ এপ্রিল, ২০২৫, শনিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে জানা গেছে। পরিবারের দায়ের করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, দুষ্কৃতীরা বাড়ি থেকে হরগোবিন্দ ও চন্দনকে টেনে বের করে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনা নিয়ে সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য এবং পরিবারের অভিযোগের মধ্যে অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

অভিযোগপত্রের বিবরণ

হরগোবিন্দ দাসের স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, “গত ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কিছু দুষ্কৃতী আমার স্বামী হরগোবিন্দ দাস ও পুত্র চন্দন দাসকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। অনেক অনুনয়-বিনয় করা সত্ত্বেও তাদের থামানো যায়নি।” অভিযোগপত্রে হত্যার জন্য দায়ী হিসেবে ইউসুয়া সেখ, একবর সেখ, হজরত আলি, কালু নাদার, নুরুল সেখ ও আনসার আলির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনো রাজনৈতিক শত্রুতা নয়, বরং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

সিপিআইএম-এর বক্তব্য

সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দাবি করেছেন, হরগোবিন্দ ও চন্দন তাদের দলের কর্মী ছিলেন এবং তারা এলাকায় দাঙ্গা রোধ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই দুই কমরেড সম্প্রীতি রক্ষার জন্য কাজ করছিলেন। তাদের হত্যা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।” তবে, এই বক্তব্যের সঙ্গে পরিবারের অভিযোগপত্রের বিবরণে অসঙ্গতি রয়েছে বলে সমালোচকরা দাবি করছেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, দুষ্কৃতীরা বাড়ি থেকে তাদের টেনে বের করে হত্যা করেছে, যা দাঙ্গা রোধের প্রচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত বলে মনে হয় না।

রাজনৈতিক অভিযোগ (murshidabad)

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তীব্র সমালোচনা করে মহম্মদ সেলিমকে লক্ষ্য করে বলেন, “আপনার বক্তব্য এবং পরিবারের অভিযোগপত্রের মধ্যে কোনো মিল নেই। তারা বাড়ি থেকে দাঙ্গা রোধ করছিলেন না, তাদের টেনে বের করে হত্যা করা হয়েছে।

এটা কি তাদের নাম হরগোবিন্দ ও চন্দন হওয়ার কারণে নয়?” তিনি আরও অভিযোগ করেন, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন এই ধরনের ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করছে। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রদায়িক উস্কানির কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এবং সিপিআইএম নেতৃত্ব এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলতে অনিচ্ছুক।

শুভেন্দু আরও উল্লেখ করেন, মহম্মদ সেলিমের রাজনৈতিক কৌশলের কারণে তিনি এই ঘটনার প্রকৃত কারণ স্বীকার করতে পারছেন না। তিনি বলেন, “সেলিম সাহেব তৃণমূলের জোটসঙ্গী, তাই তিনি সরকারের সমালোচনা করতে পারেন না। এছাড়া, তিনি নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটের উপর নির্ভর করেন, তাই সত্য বলার সাহস তাঁর নেই।”

পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা

এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশ তৎপর ছিল না, এবং ঘটনার পরেও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে ধীরগতি দেখা গেছে। সামসেরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও, তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে পরিবার সন্তুষ্ট নয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারা অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে, কিন্তু এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

Advertisements

ভারত পাবে নতুন মিসাইল, যার সামনে পাক ট্যাংক-চিনের সাঁজোয়া যান কেউই টিকতে পারবে না

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

জাফরাবাদের এই হত্যাকাণ্ড এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা এলাকার সম্প্রীতির ঐতিহ্যের উপর আঘাত। কেউ কেউ মনে করছেন, এই হত্যার পিছনে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, আবার অনেকে এটিকে ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল বলে মনে করছেন। সিপিআইএম নেতৃত্ব এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে, এবং বিজেপি এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে।

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনায় সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, এবং বিরোধীরা এটিকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা পুলিশকে দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছে।

সমাজ ও রাজনীতির প্রভাব

এই হত্যাকাণ্ড মুর্শিদাবাদের (murshidabad) রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য পরিচিত এই জেলায় এই ধরনের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিপিআইএম এবং বিজেপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে, এবং অনেকে এই হত্যার প্রকৃত কারণ জানতে চাইছেন।

জাফরাবাদের হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি অপরাধের ঘটনা নয়, এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভেদের একটি প্রতিফলন। পরিবারের অভিযোগপত্র এবং সিপিআইএম নেতৃত্বের বক্তব্যের মধ্যে অসঙ্গতি এই ঘটনার তদন্তের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

পুলিশ ও প্রশাসনের উপর এখন দায়িত্ব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে সত্য উদঘাটন করা। এই ঘটনা মুর্শিদাবাদের সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলবে। তবে, এই হত্যাকাণ্ড আমাদের সবাইকে সতর্ক করে দেয় যে, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও রাজনৈতিক বিভেদ সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে।