এক বুথে ৪৯ জন মৃত ভোটার! মেদিনীপুরে ‘ভুতুড়ে’ ভোটার নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্ক

Voter List

পশ্চিম মেদিনীপুর: একটি বুথে মৃত ভোটারের সংখ্যা ৪৯! এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাজনৈতিক শোরগোল সৃষ্টি করল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহর। অভিযোগ উঠেছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬৬ নম্বর বুথকে ঘিরে। বিজেপির দাবি, ওই বুথে মোট ৭১৪ জন ভোটারের মধ্যে ৪৯ জনই বহু আগেই মারা গেছেন, কিন্তু তাঁদের নাম এখনও ভোটার তালিকায় বহাল তবিয়তেই রয়েছে।

Advertisements

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা সহ-সভাপতি শঙ্কর গুছাইত জানিয়েছেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোঁজ করে একমাত্র এই বুথেই ৪৯ জন মৃত ভোটারকে চিহ্নিত করেছি। এটা সেই কাজ, যা বিএলওদের করার কথা ছিল।”

তাঁর অভিযোগ, শুধু এই একটি বুথ নয়, পুরো মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রেই মৃত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “এই ভুয়ো ও মৃত ভোটাররাই তৃণমূল কংগ্রেসের ছাপ্পা ভোট ও বুথ জ্যামের অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এ কারণে তারা SIR (State Infra Red surveillance)-এর মতো প্রযুক্তিকে এত ভয় পায়।”

এই প্রসঙ্গে ১৬৬ নম্বর বুথের বিএলও কবিতা চাবড়ির মন্তব্য আরও চমকপ্রদ। তিনি কার্যত অভিযোগ স্বীকার করে নেন। বলেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে ডেথ সার্টিফিকেটসহ বিডিও অফিসে পাঠাই। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে সেটা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি, কেন তা আধিকারিকরাই ভালো বলতে পারবেন।”

এই বুথেরই বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা অজিতকুমার ঘোষের মৃত্যু হয়েছে সাড়ে তিন বছর আগে এবং মা আভারানি ঘোষের সাত বছর আগে। কিন্তু তাঁদের নাম আজও ভোটার তালিকায় বহাল। একই অভিযোগ তুলেছেন স্নেহা সাহা নামে এক তরুণী, যাঁর বাবা অমরেন্দ্রনাথ সাহার মৃত্যু হয়েছে তিন বছর আগে, কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে।

Advertisements

এই প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ পাণিগ্রাহী বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “মৃত ভোটার মানেই তৃণমূল— এই যুক্তি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটা ঠিক, ভোটার তালিকায় অনেক সময় ভুল থাকে, কিন্তু তা দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তৃণমূলও এই সমস্যার কথা কমিশনের নজরে এনেছে।”

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেদিনীপুর সদরের মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায় জানান, “ভোটার তালিকা থেকে মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে, সেখানে মৃত ভোটারদের নাম আর থাকবে না।”

ভোটার তালিকায় ‘ভুতুড়ে’ ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা সহজে মিটবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রশাসন প্রক্রিয়া শুরু করলেও, বিরোধীরা তা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে যে মাঠে নেমে পড়েছে, তা স্পষ্ট।