বঙ্গ বিজেপির (BJP Bengal) সাংগঠনিক পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে নতুন দিশা দেখিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় সংগঠন সম্পাদক সুনীল বনশল স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে বুথ কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই সেসব অঞ্চল বাদ দিয়ে বাকি এলাকায় বুথ কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংখ্যালঘু এলাকা নিয়ে উদাসীনতা
বিজেপি নেতৃত্বের মতে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় দলের সংগঠন গড়ে তোলা এখন অগ্রাধিকার নয়। সুনীল বনশল মঙ্গলবারের বৈঠকে বলেন, “সংখ্যালঘু এলাকায় বুথ কমিটির জন্য অতিরিক্ত মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সেখানে সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি অনুভূত হচ্ছে না।” কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই অবস্থান থেকে স্পষ্ট, বিজেপি সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সংগঠন সাজানোর কৌশল নিয়েছে।
বুথ কমিটি গঠনের দিশা
বুথ কমিটি বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোর মেরুদণ্ড। তবে, সুনীল বনশল দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সঠিক তথ্য দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বুথ সভাপতির নির্বাচনে জল মেশাবেন না। অতীতে এই রাজ্যে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। এটি দলের কাঠামো দুর্বল করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে।”
নির্দেশ অনুযায়ী,
২৫ জানুয়ারির মধ্যে বুথ কমিটি গঠন সম্পূর্ণ করতে হবে।
৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মণ্ডল কমিটি গঠন করতে হবে।
১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা সভাপতি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
বর্তমান অগ্রগতি
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো বুথ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়েছে। তবে, এটি দলীয় লক্ষ্য পূরণের তুলনায় যথেষ্ট নয়। রাজ্য নেতৃত্বের ওপর চাপ বাড়ছে সময়মতো এই প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার প্রতি বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি
বিজেপির এই কৌশল নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস” স্লোগানকে সামনে রেখে বিজেপি যে দীর্ঘদিন ধরে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির বাইরে থাকার বার্তা দিয়েছিল, সেই নীতির বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বুথ কমিটি না গড়ার সিদ্ধান্ত দলীয় প্রচেষ্টার সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্ট করছে।
কারচুপি এবং সতর্কবার্তা
সুনীল বনশল অতীতে দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে হওয়া কারচুপি এবং অনিয়মের উদাহরণ টেনে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “সঠিক তথ্য দিন এবং নিরপেক্ষভাবে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। এতে দলের ভিত্তি মজবুত হবে এবং ভবিষ্যতে সংগঠন লাভবান হবে।”
তবে, এই নির্দেশ কার্যকর করতে হলে রাজ্য নেতৃত্বকে কঠোরভাবে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
সংগঠন গঠনের চ্যালেঞ্জ
বঙ্গ বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো বুথ স্তরে সংগঠন গড়ে তোলা। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিশালী উপস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে বিজেপিকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে হবে। কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিকে এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত তাদের কৌশলগত দুর্বলতাকেই সামনে নিয়ে আসছে।
সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্তে বিজেপির “সবকা সাথ” স্লোগান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী বুথ কমিটি গঠন এবং সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে রাজ্য নেতৃত্বকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তবে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলকে উপেক্ষা করা দলীয় কৌশলের সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরেছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি রাজ্যে নিজেদের সংগঠন কতটা শক্তিশালী করতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।