বিধানসভার রণকৌশলে চার জেলায় নতুন সভাপতি ঘোষণা বিজেপির

পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। এই লক্ষ্যে রাজ্য বিজেপি সম্প্রতি চারটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির নাম ঘোষণা…

BJP new elected president

পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। এই লক্ষ্যে রাজ্য বিজেপি সম্প্রতি চারটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির নাম ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপকে দলের রণকৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Advertisements

নতুন সভাপতিদের নাম হল দার্জিলিঙে সঞ্জীব তামাং, ব্যারাকপুরে তাপস ঘোষ, বনগাঁয় বিকাশ ঘোষ এবং ঘাটালে তন্ময় দাস। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিজেপি রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন গতি আনার চেষ্টা করছে।বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অগস্ট থেকে রাজ্য কমিটি গঠন এবং সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য পদাধিকারীদের নাম চূড়ান্ত করতে বৈঠক শুরু হয়েছে।

Advertisements

এই বৈঠকগুলিতে রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল, রাজ্য ইনচার্জ মঙ্গল পাণ্ডে এবং সহ-ইনচার্জ অমিত মালব্য অংশ নিয়েছেন। এই বৈঠকগুলির মূল উদ্দেশ্য হলো আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বুথ, মণ্ডল এবং জেলা স্তরে নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা। বিশেষ করে, প্রার্থী নির্বাচন এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

চারটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে বনগাঁ এবং ব্যারাকপুরে সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বনগাঁয় পূর্বতন সভাপতি ছিলেন দেবদাস মণ্ডল, আর ব্যারাকপুরে ছিলেন মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ঘাটালে তন্ময় দাসের নেতৃত্বে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।

দার্জিলিঙে সঞ্জীব তামাংয়ের নিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এই অঞ্চলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে বিজেপি এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

রাজ্য বিজেপির এই পদক্ষেপ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখনও ক্ষমতায় আসতে পারেনি, তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলটি উল্লেখযোগ্য আসন অর্জন করেছিল।

এবার বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালীভাবে লড়াই করতে চায়। বিশেষ করে, বনগাঁ এবং ব্যারাকপুরের মতো এলাকায়, যেখানে তৃণমূলের প্রভাব বেশি, বিজেপি তাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই পরিবর্তন এনেছে।

শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “আমরা বাংলার মানুষের জন্য কাজ করছি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমাদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নতুন সভাপতিরা তাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দলের লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন।” তিনি আরও বলেন, “বাংলার মানুষ পরিবর্তন চায়, এবং বিজেপি তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে প্রস্তুত।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নিয়োগগুলি বিজেপির কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। বনগাঁ এবং ব্যারাকপুরে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দলটি স্থানীয় স্তরে নতুন গতি আনতে চাইছে। এই দুই অঞ্চল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে পড়ে, যেখানে তৃণমূলের শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। তবে, বিজেপি গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে তাদের সমর্থন বাড়িয়েছে। ঘাটালে তন্ময় দাসের পুনর্নিয়োগ দলের ধারাবাহিকতার প্রতি আস্থার ইঙ্গিত দেয়।

সেন্ট্রাল ভিস্তার প্রথম সাফল্য, মোদীর উদ্বোধনে চালু কর্তব্য ভবন-০৩

দার্জিলিঙে সঞ্জীব তামাংয়ের নিয়োগ স্থানীয় গোর্খা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপির প্রভাব বাড়ানোর একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, “বিজেপি যতই সভাপতি বদল করুক, বাংলার মানুষ তৃণমূলের উপরই ভরসা রাখে। এই ধরনের পরিবর্তন তাদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার প্রকাশ।” তবে বিজেপির জেলা স্তরে এই দলীয় রদবদল কতটা কাজে আসে তা সময় বলবে এবং বলবে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল।