ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বৈঠক, বিরোধীদের না ডাকা নিয়ে বিতর্ক, দেব জানালেন তার কারণ

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে রাজ্য সরকার নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি ঘাটাল টাউন হলে এই প্রকল্প নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা,…

BJP and CPI(M) Excluded from Ghatal Master Plan Meeting, Sparks Controversy

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে রাজ্য সরকার নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি ঘাটাল টাউন হলে এই প্রকল্প নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংসদ দেব, মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া এবং অন্যান্য সরকারি কর্তারা। তবে, এই বৈঠকে বিজেপি ও সিপিএমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে একটি চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা মনে করছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে রাজ্য সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করছে এবং আগামী নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রকল্পের ঘোষণা করছে।

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তবে বিরোধীরা এই টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সিপিএম এবং বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা কঠিন, এবং এটি শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রচারের অংশ। সিপিএমের অভিযোগ, তারা কাগজে এই বৈঠকের খবর পেয়েছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও পূর্ববর্তী আলোচনা বা যোগাযোগ হয়নি। তারা আরও বলেন, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা ৫০০ কোটি টাকার থেকে অনেক বেশি হবে, এবং এটি শুধুমাত্র নির্বাচনী উদ্দেশ্য সাধনের একটি কৌশল।

   

বিজেপির ঘাটাল বিধায়ক শীতল কপাটেরও একই মতামত। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা বারবার বিধানসভায় ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের গুরুত্ব তুলে ধরেছি, কিন্তু অবশেষে ৫০০ কোটি টাকার ঘোষণা করা হয়েছে। এই টাকায় শুধু খাল কাটা সম্ভব, কিন্তু প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’’ তিনি মনে করেন, এই প্রকল্পের ঘোষণা আসলে ২০২৬ সালের নির্বাচনের উদ্দেশ্যে।

এদিকে, সাংসদ দেব বৈঠক নিয়ে বলেন, ‘‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে কীভাবে এগোতে হবে, তা নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। এখন কমিটিগুলি কাজ শুরু করবে এবং মানুষের কাছে পৌঁছাবে।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমি ভোটে দাঁড়াতে চাইনি, তবে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে কথা দিয়েছেন যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হবে, আর সেই জন্যই আমি ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ দেব জানিয়ে দেন যে, প্রকল্পটির জন্য রাজ্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত করতে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।

দেবের বক্তব্য অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী একবারই ঘোষণা করেছিলেন যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হবে এবং তিনি দৃঢ়ভাবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চান। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।’’ এমনকি তিনি যোগ করেন, ‘‘আমি জানি না, বিরোধীরা কেন এই প্রকল্প নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে।’’

এদিনের বৈঠকে সিপিএম এবং বিজেপি প্রতিনিধিদের না ডাকায় আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেব বলেন, ‘‘তারা যদি বিশ্বাস করে যে রাজ্য সরকার এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারবে, তবে আগামীকালই তাদের ডাকা হবে।’’ তিনি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে যে রাজ্য সরকার প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। তারপরই তারা বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন।’’

বিরোধীরা বৈঠকে না ডাকায় ক্ষুব্ধ হলেও, রাজ্য সরকার ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন নিয়ে দৃঢ় মনোভাব পোষণ করছে। তাদের দাবি, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রকল্পের ঘোষণার মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ানো হচ্ছে। তবে, বিরোধীরা প্রকল্পটি নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করছে, যা রাজনৈতিক বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করছে।